Home Third Lead খাসিয়া পল্লী ও পানবাগান: পাহাড়ের কোলে অন্যরকম জীবন

খাসিয়া পল্লী ও পানবাগান: পাহাড়ের কোলে অন্যরকম জীবন

 বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি বুকে ছড়িয়ে আছে বহু খাসিয়া পল্লী। এরা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম, যাদের জীবনযাপন, বিশ্বাস এবং অর্থনীতি প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাদের পল্লীগুলো ভিন্ন সংস্কৃতি, নীরবতা এবং বিশেষ করে পানচাষের জন্য সুপরিচিত। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সাজানো পানবাগান আর বনের স্নিগ্ধ ছায়া মিলিয়ে এখানে তৈরি হয়েছে এক অনন্য পরিবেশ, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে সহজেই।

খাসিয়া জনগোষ্ঠীর সামাজিক কাঠামো মাতৃতান্ত্রিক। পরিবারে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ নারী উত্তরাধিকারের ভূমিকা পালন করেন। নারীর এই নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে তাদের দৈনন্দিন শ্রম, পানচাষের দক্ষতা ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ। সকালবেলা সূর্য ওঠার আগেই তারা পানবাগানে কাজে নেমে পড়েন—লতা ছাঁটা, মাচা বাঁধা, চারা বাঁচিয়ে তোলা, আর বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন সারাদিন। তাদের হাতেই পানচাষের প্রধান দায়িত্ব, যা স্থানীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

খাসিয়াদের পানবাগান সাধারণত বনাঞ্চলের ঢাল বেয়ে তৈরি হয়। বাঁশের খুঁটিতে বেয়ে ওঠা পানলতা আর চারপাশে সবুজ পাতার পল্লব পরিবেশকে করে তোলে আরও চিত্রময়। বাগানের ভেতরে দাঁড়িয়ে নরম বাতাসে দুলতে থাকা পানলতা দেখতে যেন পরীর দেশের কোনো দৃশ্য মনে হয়। মৌলভীবাজারে উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়, অনেকে বিদেশেও রপ্তানি করে, যদিও তা সীমিত পরিসরে।

তাদের সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মীয় বিশ্বাসও আলাদা স্বাদ এনে দেয়। খাসিয়ারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলেন এবং খ্রীষ্টধর্মের অনুসারী। পল্লীর মাঝখানে ছোট ছোট প্রার্থনালয় চোখে পড়ে। উৎসবের সময়ে তারা রঙিন পোশাক পরে নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন, যা স্থানীয় পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তবে সব সৌন্দর্যের আড়ালে রয়েছে নানা সংকট। জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ, বনভূমির সংকোচন, আধুনিকতার প্রভাব এবং পানচাষের বাড়তি খরচ—এই সবই তাদের জীবনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। অনেক বাগান আজ ঝুঁকির মুখে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে আবহাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া পর্যটকদের অসচেতনতা, পল্লীতে অনধিকার প্রবেশ এবং পরিবেশ দূষণের ঘটনাও বাড়ছে।

তবুও খাসিয়া পল্লীকে ঘিরে যে শান্ত সৌন্দর্য, তা মৌলভীবাজারকে নতুনভাবে পরিচিত করেছে। এখানে পাহাড়, বন, মানুষ আর পরিশ্রমের গল্প মিলেমিশে তৈরি করেছে জীবনের এক সম্পূর্ণ ছবি। যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং ভিন্ন সংস্কৃতির জীবন কাছ থেকে দেখতে চান, তাদের জন্য খাসিয়া পল্লী নিঃসন্দেহে এক অনন্য গন্তব্য।

আপনি কি খাসিয়া পল্লী বা তাদের পানবাগান কখনও ঘুরে দেখেছেন? আপনার চোখে দেখা সেই বিশেষ অভিজ্ঞতা আমাদের জানাতে কমেন্ট করুন। স্থানীয় সংস্কৃতি রক্ষায় আপনার সচেতনতা হতে পারে তাদের ভবিষ্যতের নিরাপদ ভরসা।