বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ: নাতনিকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ থানায় জানানোয় প্রাণ দিতে হলো আজগর আলী নামের এক বৃদ্ধকে। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের রায়দক্ষিণ গ্রামে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ৬৫ বছর বয়সী আজগর আলীকে। তিনি পেশায় চায়ের দোকানি ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজগরের ১৩ বছর বয়সী নাতনিকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিলেন প্রতিবেশী যুবক আল-আমিন (২২)। পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রতিবাদ জানানো হলেও বিরতি মেলেনি। শেষ পর্যন্ত সোমবার (২৮ এপ্রিল) আজগর আলী নিজেই সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
তারপরের দিনই, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আল-আমিন এবং আরও তিন-চারজন সহযোগী মোটরসাইকেলে এসে আজগর আলীকে দোকান থেকে টেনে বের করে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হলে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সিংগাইর থানার ওসি জানান, “ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আল-আমিনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তরা পলাতক, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনায় বাংলাদেশ দণ্ডবিধির একাধিক ধারা প্রযোজ্য হতে পারে—ধারা ৩০২: হত্যা, ধারা ৩২৩ ও ৩২৬: আঘাত ও গুরুতর জখম, ধারা ৩৫৪: নারী উত্ত্যক্ত/শ্লীলতাহানি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০–এর অধীনে যৌন হয়রানির অভিযোগেও বিচার হতে পারে।
ঢাকার নারী ও শিশু আদালতের আইনজীবী সালমা খাতুন বলেন, “এটি যদি প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা, অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।”
গ্রামজুড়ে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এক প্রতিবেশী বলেন, “একজন নানা নিজের নাতনির নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের কাছে গিয়েছিলেন। এখন তাঁকেই মরতে হলো। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাবে।নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সমাজে সহিংসতার এই চক্র আরও জটিল হয়ে উঠবে।”
এ ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, নারী ও শিশু নির্যাতন, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, এখনও একটি বড় সংকট। অভিযোগ জানাতে গেলে হুমকি বা সহিংসতার মুখে পড়ার শঙ্কাও থেকেই যায়।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। নিহত আজগর আলীর পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন।