হেলথ ডেস্ক:
ওয়াশিংটন: যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করার পর থেকে নানা নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করেছিলেন অধিকারকর্মীরা। সেই আশঙ্কার একটি বড় দিক আজ বাস্তব হয়েছে, বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, বিশেষ করে সেইসব অঞ্চলে যেখানে গর্ভপাত প্রায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ-এর সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে গর্ভপাতের জন্য বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়েছে এমন কাউন্টিগুলোতে রোমান্টিক সঙ্গীর দ্বারা সহিংসতার ঘটনা ৭ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এই তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলেন, প্রায় ৯,০০০ অতিরিক্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে শুধুমাত্র গর্ভপাত সীমিত করা রাজ্যগুলোতেই। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১.২৪ বিলিয়ন ডলার।
কেন বাড়ছে সহিংসতা?
গবেষণার সহ-লেখক এবং বেন্টলি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ধবল ডেভ বলেন, “দূরে ভ্রমণ, ছুটি নেওয়া, অতিরিক্ত খরচ এসবের ফলে মানসিক ও আর্থিক চাপ বাড়ে, যা সম্পর্কের গুণমান নষ্ট করে এবং সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়।”
গড়ে, গর্ভপাত নিষিদ্ধ রাজ্যগুলোর মহিলাদের ২৪১ মাইল বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়েছে চিকিৎসার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে, একজন নারী শেষ পর্যন্ত গর্ভপাত করতে পারলেও সেই প্রক্রিয়ার দীর্ঘতা এবং চাপ তাঁদের সম্পর্ককে আরও বিপর্যস্ত করেছে।
গর্ভপাত সীমিত হলে নারীরা আটকে যান সহিংস সম্পর্কে
একটি আলোচিত গবেষণা Turnaway Study অনুসারে, যাঁরা গর্ভপাত করতে পারেননি, তাঁদের সহিংসতার শিকার হওয়ার হার বেশি ছিল, সেই সঙ্গে আত্মহত্যার চিন্তাও ছিল বেশি। গর্ভাবস্থার সময় পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা আগেই প্রমাণিত; এক গবেষণায় বলা হয়, গর্ভবতী নারীদের হত্যার ঝুঁকি ১৬% বেশি।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র ও কমশিক্ষিত জনগোষ্ঠী
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব এলাকায় মানুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আয় কম, সেখানে এই সহিংসতা বৃদ্ধির হার বেশি। ফলে গর্ভপাত সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে।
সহায়তার পথ সংকুচিত হচ্ছে
If/When/How সংস্থার প্রধান আইনি ও নীতি পরিচালক সারা এল. অ্যিন্সওয়ার্থ জানান, এখন অনেক নারী গর্ভপাত নিয়ে সহিংস সম্পর্কের মধ্যে আটকে আছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গীরা পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়, এমনকি যদি সেটি আইনগতভাবে বৈধ না-ও হয়। “এই আইনগত পরিবেশকে ব্যবহার করে নির্যাতনকারীরা তাঁদের সঙ্গীদের ভয় দেখাচ্ছেন,” বলেন অ্যিন্সওয়ার্থ।
ন্যাশনাল রিসোর্স সেন্টার অন ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর প্রধান নির্বাহী পামেলা জ্যাকবস জানান, অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থার কারণে হটলাইনে সহিংসতার অভিযোগ প্রায় ১০% বেড়েছে। তাঁর মতে, গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞা নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা হ্রাস করছে, যা তাঁদের সহিংস সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসার পথ আরও কঠিন করে তুলছে।
ভবিষ্যতের দিশা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনি সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং গর্ভপাতের সহজলভ্যতা বাড়ানো গেলে এই সহিংসতা রোধে বড় ভূমিকা রাখা যেত। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তেমন কোনও ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। বরং SNAP এবং Medicaid-এর মত সামাজিক সহায়তা কর্মসূচিতে কাটছাঁটের ফলে আরও বেশি নারী আর্থিক অনিরাপত্তায় ভুগবেন।
তাছাড়া, যেসব ফেডারেল ফান্ডেড রেপ ক্রাইসিস সেন্টার বা হেল্পলাইনগুলো নারীদের সহায়তা করে, সেগুলোও বাজেট সংকটে ভুগছে।
এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয় যখন নারীদের অধিকার খর্ব করা হয়, তখন তার সরাসরি প্রভাব পড়ে তাঁদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও জীবনের ওপর। সেই সঙ্গে, প্রয়োজন আরও সংবেদনশীল ও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালার, যা নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।