হেলথ ডেস্ক: গাজরের রস স্বাদে যেমন মিষ্টি, তেমনি পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কে, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার—যা একযোগে চোখ, ত্বক, লিভার ও হৃদ্যন্ত্রসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
হেলথলাইন–এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কাপ (২৩৬ গ্রাম) গাজরের রসে রয়েছে প্রায় ৯৪ ক্যালোরি, ২ গ্রাম প্রোটিন, ১ গ্রামেরও কম চর্বি, ২২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৯ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত শর্করা এবং ২ গ্রাম ফাইবার। এতে ভিটামিন এ-এর দৈনিক চাহিদার ২৫১ শতাংশ, ভিটামিন সি-এর ২২ শতাংশ, ভিটামিন কে-এর ৩১ শতাংশ ও পটাশিয়ামের ১৫ শতাংশ পূরণ হয়।
এখানে তুলে ধরা হলো গাজরের রসের সাতটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা—
১. চোখের জন্য উপকারী
গাজরের রস ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে অপরিহার্য। এছাড়া এতে থাকা লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন চোখকে ক্ষতিকর আলো থেকে রক্ষা করে এবং বয়সজনিত চোখের রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন এ, সি এবং বি৬ থাকায় গাজরের রস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ভিটামিন বি৬-এর ঘাটতি হলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। গাজরের রসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ইমিউন কোষগুলোকে রক্ষা করে।
৩. ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক
গাজরের রসে থাকা বেটা ক্যারোটিন, লুটেইন এবং পলিএসিটিলিন জাতীয় যৌগগুলি টেস্ট টিউব ও প্রাণীতে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি দমন ও কোষ ধ্বংসে সহায়ক প্রভাব দেখিয়েছে। বিশেষত লিউকেমিয়া ও কোলন ক্যানসারে কার্যকারিতা লক্ষ করা গেছে।
৪. রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা
গাজরের রসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি ঘটায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, ফার্মেন্টেড গাজরের রস ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে ডায়াবেটিস থাকলে অতিরিক্ত পান না করাই ভালো।
৫. ত্বকের সৌন্দর্যে সহায়ক
ভিটামিন সি ও বেটা ক্যারোটিন ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে এবং ফ্রি র্যাডিকেল ও সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। গাজরের রস ব্রণ কমাতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক।
৬. হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে
গাজরের রসে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো রক্তে ক্ষতিকর চর্বি জমা প্রতিরোধ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৭. লিভার রক্ষায় সহায়ক
গাজরের রসে থাকা ক্যারোটিনয়েড উপাদানগুলো প্রদাহ কমায় ও লিভারকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ফ্যাটি লিভারের নির্দিষ্ট চিহ্নগুলো হ্রাস করতে পারে।
সতর্কতা
- অতিরিক্ত গাজরের রস খেলে ক্যারোটিনেমিয়া হতে পারে, ফলে ত্বকে হলদেটে আভা দেখা যায়।
- ডায়াবেটিস রোগীরা দৈনিক ৪ আউন্স (প্রায় ১১৮ মিলি)-এর বেশি পান না করাই ভালো।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সীমিত পরিমাণে গাজরের রস রাখা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এটি শুধু রোগ প্রতিরোধে নয়, বরং সার্বিক সুস্বাস্থ্যে এক অনন্য প্রাকৃতিক পানীয়।