Home আন্তর্জাতিক গাজায় আধুনিক কারবালা: তৃষ্ণায় মৃত্যু শিশুর, পানি রুদ্ধ করে যুদ্ধ

গাজায় আধুনিক কারবালা: তৃষ্ণায় মৃত্যু শিশুর, পানি রুদ্ধ করে যুদ্ধ

ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

গাজা উপত্যকায় এখন চলছে এক আধুনিক কারবালা। যেখানে বুলেটের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে পানির অভাব। ফিলিস্তিনি পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, চলমান সংঘাতে গাজার ৮৫ শতাংশের বেশি পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। একেকজন বাসিন্দা দৈনিক গড়ে মাত্র ৩ থেকে ৫ লিটার পানি পাচ্ছেন যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি মানদণ্ড ১৫ লিটারের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র।

পানি কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গাজাবাসী এখন শুধু যুদ্ধের গোলায় নয়, পানির অভাবেও এক নির্মম মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ যেন আধুনিক কারবালার পুনরাবৃত্তি—যেখানে নিষ্পাপ শিশুরা পানি চায়, আর তাদের ঠোঁট রয়ে যায় শুকনো।”

তৃষ্ণার্ত শিশুদের কান্নায় মুখর গাজা: ইউনিসেফ-এর এক প্রতিবেদন বলছে, গাজায় অন্তত ৭ লক্ষাধিক শিশু আজ বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে। অনেকে বাধ্য হয়ে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি বা দূষিত পুকুরের জল পান করছে—যেমন হয়েছিল কারবালার প্রান্তরে, যেখানে শিশুদের মুখে পানি পৌঁছায়নি, পৌঁছেছিল শুধু তৃষ্ণা আর কান্না। আজ গাজার শিশুদের চোখেও সেই একই করুণ আর্তনাদ।

ছবি সংগৃহীত

হাসপাতাল ও আশ্রয়শিবিরগুলোতে প্রতিদিন পানির জন্য হাহাকার বাড়ছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত জ্বালানি লাইন ও বিদ্যুৎবিহীন পাম্পের কারণে হাজার হাজার মানুষ শরীর ধোয়ার তো দূরের কথা, এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ :বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  সতর্ক করে বলেছে, যদি দ্রুত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে গাজায় মহামারি ছড়িয়ে পড়বে। কলেরা, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিসের মতো রোগে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্টের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় জরুরি পানি সরবরাহের চেষ্টা করছে। কিন্তু ইসরায়েলি অবরোধ, সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা এবং অবকাঠামোগত ধ্বংস সেই সহায়তা পৌঁছাতে দিচ্ছে না। গাজার জন্য খুলছে না ‘আধুনিক ফোরাত’, বরং অবরুদ্ধ হয়ে আছে জীবনরক্ষার উৎস।

মানবতার প্রশ্ন: বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার এই পানিবন্ধ পরিস্থিতি শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং এক নৈতিক বিপর্যয়ও। যুদ্ধের নামে যখন জল রুদ্ধ করে দেওয়া হয়, তখন তা শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকে না,  তা হয়ে ওঠে ইতিহাসের কলঙ্ক। গাজার শিশুরা এখন নতুন কারবালার নীরব সৈনিক, যাদের অস্ত্র শুধু কান্না, আর প্রতিরোধ শুধু বেঁচে থাকার আকুতি।

বিশ্লেষকরা  আরও বলছেন, গাজা এখন কেবল বোমা ও গুলির আঘাতে নয়, বরং পানির অভাবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে এখনই টেকসই মানবিক করিডোর, অবিলম্বে জ্বালানি সরবরাহ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।