বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: বিশ্ববাণিজ্যে নতুন শুল্ক তরঙ্গ এবং কাঁচামাল সংকটের জেরে ভারতীয় গাড়ি এবং অটো কম্পোনেন্ট শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় জর্জরিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশেষত ইউএস বাজারে রপ্তানি নির্ভরতা থাকা প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারীরা মারাত্মক চাপ অনুভব করছেন, একই সঙ্গে চীনের দুর্লভ উপাদান রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ইলেকট্রিক যান ও মোটর শিল্পকে কাঁচামাল সংকটে ফেলেছে।
প্রেক্ষাপট ও মুহূর্তের পরিস্থিতি
আগস্ট ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে কিছু ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হার বলবৎ করেছে বলেই শিল্প বিশেষজ্ঞরা অ্যালার্ট দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে বিশেষ করে অটো পার্টস রপ্তানিতে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ছিল বড় একটি ক্রেতা বাজার। বিশ্লেষকদের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হঠাৎ শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতের অটো পার্টস শিল্পের বড় অংশ সংবেদনশীল হয়ে পড়েছে।
অর্থনৈতিক প্রভাবের কিছু খাতচিত্র
রেটিং সংস্থা আইসরা জানিয়েছে উচ্চ শুল্কের কারণে দেশের মোট অটো কম্পোনেন্ট উৎপাদনের প্রায় আট শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা সরাসরি রপ্তানি আয়ের ক্ষতি ও মুনাফায় ধাক্কা দেবে। অন্যদিকে সাংবাদিক জরিপ ও বাণিজ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ২০২৪-২৫ এ প্রায় ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ভারতের অটো পার্টস ইউএসে রফতানি হয়েছিল, যা এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। এসব পরিবর্তনের সঙ্গে মিলিয়ে ভারতের মে থেকে আগস্ট ২০২৫ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
সরবরাহশৃঙ্খল ও কাঁচামাল সংকট
ইলেকট্রিক যান নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের মাগনেট ও দুর্লভ ধাতু সরবরাহে চীন ভূমিকা রেখেছে। চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং ওই উপাদানের সরবরাহে অনিশ্চয়তা ইভি মোটর ও ব্যাটারি চেইনে ভাঁজ ফেলেছে। ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলো বিকল্প প্রযুক্তি, যেমন রেয়ার আর্থবিহীন মোটর বা দেশীয় মাগনেট তৈরির দিকে ঝুঁকছে। উদাহরণ হিসেবে কিছু ভারতীয় কোম্পানি ইতিমধ্যেই মাগনেটবিহীন মোটর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে বলে খবর আছে।
শিল্পের প্রতিক্রিয়া ও কৌশল
শিল্প সংগঠন ও প্রস্তুতকারীরা বলছেন, বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা এবং ঘরের ভিত্তিতে যন্ত্রাংশ তৈরির ওপর দ্রুত বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আয় দুটোই সংকুচিত হবে। অনেক প্রযোজক এখন ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকা হাইতির মতো বাজারে প্রবেশের কৌশল নিয়ে কাজ করছে। তাছাড়া দেশীয় ভ্যালু চেইন গড়ে তুলতে উৎপাদন এবং গবেষণা-বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি উঠছে।
সরকারি পদক্ষেপ ও সম্ভাব্য সমাধান
কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন নীতি প্যাকেজ এবং কম্পোনেন্ট উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা প্রকল্পের কথা বলছে। সরকারের নীতি নথিতে অটোমোবাইল খাতকে গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে শক্তিশালী করার নির্দেশনা ও পরিকল্পনার উল্লেখ আছে। একই সঙ্গে ভারতীয় প্রশাসনের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পর্যায় থেকে মার্কিন ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে জরুরি সমঝোতা সম্ভাব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে সংবাদে উল্লেখ এসেছে, যার ফলে ভবিষ্যতে কিছু শুল্ক রেয়াত বা সমঝোতা হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।
বিশ্লেষণ ও সুপারিশ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন ধাপে কাজ করতে হবে। প্রথম ধাপে দ্রুত বিকল্প বাজার নির্ধারণ ও সেখানে মান ও সরবরাহ দেয়ার সক্ষমতা তৈরি করা, দ্বিতীয় ধাপে ঘরে ঘরে অংশ ও উপাদান উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানো, এবং তৃতীয় ধাপে কূটনৈতিকভাবে বাণিজ্য বাধা কমাতে আন্তর্জাতিক মিটিং ও চুক্তি কার্যকর করা। এই পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সংক্ষিপ্ত মেয়াদে রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে প্রযুক্তি দক্ষতা তলানিতে পড়ে যেতে পারে।
সংবাদ প্রতিক্রিয়া
শিল্প সংগঠনের মুখপাত্ররা জানান, দ্রুতই যদি বিকল্প বাজারে প্রবেশ এবং দেশীয় সরবরাহশৃঙ্খল শক্তিশালী করা না হয়, সমস্যার জট আরও ঘনীভূত হবে। সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ না করলে ক্ষতির পরিধি বাড়বে বলেও তারা সতর্ক করেছেন।