বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, শেরপুর: শেরপুরের গারো পাহাড়ে কোনো ধরনের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে না বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একইসঙ্গে তিনি গারো পাহাড়ে বন্যহাতি সংরক্ষণ এবং মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের দাওধারা এলাকায় প্রস্তাবিত পর্যটন কেন্দ্রটি পরিদর্শনে গেলে তার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসময় কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা দুই পক্ষের উত্তেজনাকর অবস্থায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত হন ছয়জন সাংবাদিক।
আহত সাংবাদিকরা হলেন- এখন টিভি ও বাসসের জেলা প্রতিনিধি জাহিদুল খান সৌরভ, বৈশাখী টিভির বিপ্লব দে কেটু, ইনডিপেনডেন্ট টিভির মেরাজ উদ্দিন, বাংলা টিভির নাঈম ইসলাম, সময় টিভির ভিডিও সাংবাদিক বাবু চক্রবর্তী ও বাংলাদেশ খবরের প্রতিনিধি শাহরিয়ার শাকির। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দাওধারা এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেয় নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন। বনবিভাগের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কিছুদিন আগে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বন বিভাগের দাবি, প্রস্তাবিত এলাকা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অংশ, যেখানে প্রায় ২১ হাজার একর বনভূমির মধ্যে অন্তত ১৫ শতাংশ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব এলাকায় বন্যহাতির বিচরণ রয়েছে এবং মানুষের বসতি ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করলে তা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “বনের জমিতে কোনোভাবেই পর্যটন কেন্দ্র হবে না। বনের ভেতরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে এবং আবাসন প্রকল্প বা বালু-পাথর উত্তোলন কার্যক্রমও বন্ধ করা হবে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সম্মিলিতভাবে সচেতন হতে হবে।”
এরপর তিনি মধুটিলা রেঞ্জে বন বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি বনায়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে সহায়তার চেক বিতরণ করেন। হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে গঠিত এক্স এলিফেন্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি)-এর সদস্যদের সঙ্গেও মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বন্যহাতির আক্রমণে নিহত দুটি পরিবারের প্রতিটি পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে এবং ফসলের ক্ষতির জন্য ১৫ জনকে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৫২০ জন ইআরটি সদস্যদের মাঝে উপকরণ বিতরণ করা হয়।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী রেজা খান, ইআরটি সদস্য হাসমত আলী, বিজিবি কর্মকর্তা লে. কর্নেল সানবীর হাসান মজুমদার, জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় শেরপুর ও নালিতাবাড়ী প্রেস ক্লাব তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। নালিতাবাড়ী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল মান্নান সোহেল বলেন, বনের অবৈধ বালু-পাথর লুট ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে প্রশ্ন করায় স্থানীয়দের একটি অংশ ক্ষিপ্ত হয়ে এ হামলা চালিয়েছে। তিনি জানান, আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী থানার ওসি সোহেল রানা জানান, উপদেষ্টার সফর শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের বাগবিতণ্ডা হয় এবং একপর্যায়ে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানতে পেরেছেন। তবে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।