আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনের আনহুই প্রদেশের হেফেই বন্যপ্রাণী উদ্যানে থাকা একটি বিশেষ চেহারার বানর এখন দেশজুড়ে ভাইরাল। কালো চুল ও চৌকোণ মুখের অধিকারী এই পুরুষ ব্ল্যাক-ক্যাপড ক্যাপুচিন বানরটির নাম ‘দাঝুয়াং’, যার অর্থ ‘বড় ও শক্তিশালী’। চীনা সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে Douyin (চীনের টিকটক)-এ মে মাসের শুরু থেকেই আলোচনায় সে।
এক দশক পর ভাইরাল:
হেফেই উদ্যান কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় ১০ বছর ধরে উদ্যানের বাসিন্দা দাঝুয়াং এতদিন নজরে আসেনি। কিন্তু ২০২৫ সালের মে দিবসের ছুটিতে এক দর্শনার্থী তার ভিডিও আপলোড করার পর থেকেই শুরু হয় ভাইরাল জোয়ার। দাঝুয়াং-এর চৌকোণ মুখকে চীনারা তুলনা করছেন চীনা অক্ষর ‘গুও’ (国)-এর সঙ্গে, যা একধরনের চৌকোণ মুখের প্রতীক।
দর্শনার্থীরা তাকে ডাকতে শুরু করেছে “গুও মুখ বানর” নামে। যদিও সে মানুষ নয়, তার মুখাবয়ব এতটাই মানবসদৃশ যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তাকে ‘ইউনিক ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন’ বলে অভিহিত করছেন।
একটি সুখী পরিবার:
২০১৫ সালে দাঝুয়াং ও তার ছোট ভাই শাওশুয়াইকে হাংঝৌ সাফারি পার্ক থেকে হেফেইতে আনা হয়। ২০২৪ সালে জিয়াংসু প্রদেশের উক্সি বন্যপ্রাণী উদ্যান থেকে আনা হয় একটি মেয়ে বানর, যার নাম জিয়াওমেই। ২০২৫ সালের এপ্রিলে দাঝুয়াং ও জিয়াওমেই একটি সন্তানের জন্ম দেয়।
বর্তমানে তিন সদস্যের এই পরিবার—দাঝুয়াং, জিয়াওমেই ও তাদের বাচ্চা—দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তারা প্রায়ই দেখে থাকেন দাঝুয়াং স্ত্রী জিয়াওমেইকে পরিচর্যা করছে, আর জিয়াওমেই কোলে বাচ্চা নিয়ে ঘুরছে। অনলাইন ভক্তরা তাদের এই পরিবারকে অভিহিত করেছেন “দাঝুয়াং-এর সুখী জীবন” হিসেবে।
‘আনকমনলি কিউট’ বা ‘কিউটলি আনকমন’?
অনেকেই দাঝুয়াংকে ‘অদ্ভুত সুন্দর’ বা ‘কিউটলি আনকমন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে প্রাণী পালনকারী ঝাং চুনশুয়ে বলেন, “ব্ল্যাক-ক্যাপড ক্যাপুচিন প্রজাতিতে আলফা পুরুষদের মুখ সাধারণত একটু চওড়া ও শরীরের গঠন বড় হয়। সেই বিবেচনায় দাঝুয়াং আসলে বেশ আকর্ষণীয় ও সুদর্শন।”
ঝাং আরও জানান, এই প্রজাতির বানরের লেজ দীর্ঘ ও নমনীয় হয়, যা দিয়ে তারা শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং হাত ব্যবহার করে গাছে চড়া বা খাবার সংগ্রহ করে। তারা বাদাম ফাটানোর মতো কাজে পাথরও ব্যবহার করতে পারে—এক বিরল দক্ষতা।
দাঝুয়াং-এর স্বভাবও মৃদু ও শান্ত। অচেনা কাউকে দেখলে সে গাছের উঁচু ডালে উঠে আত্মগোপন করে।
চীনে ‘প্রাণী সেলিব্রিটি’ প্রবণতা:
দাঝুয়াং একা নয়। গত কয়েক বছরে চীনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী উদ্যান থেকে একাধিক প্রাণী সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০২৪ সালে সিচুয়ানের পাংঝিহুয়া উদ্যানের মোটা চিতাবাঘের তুলনা হয়েছিল জুটোপিয়া চলচ্চিত্রের ‘লেপার্ড অফিসার’-এর সঙ্গে। ২০২৫ সালের শুরুতে নানজিং হংশান ফরেস্ট চিড়িয়াখানার সাকি বানর জুটি, দুদু ও হুয়াহুয়াও ভাইরাল হয়।
২০২৩ সালে ইউনান উদ্যানের একটি গোলগাল শিয়াল ‘গ্যাস ট্যাংক’ নামে পরিচিতি পায়, আর ২০২০ সালে হাইনানের একটি চিড়িয়াখানায় দুটি মোটা পান্ডার জন্য চালু হয় “ওজন কমাও” কর্মসূচি।
মানুষের ভালোবাসা ও কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ:
হেফেই-এর স্থানীয় বাসিন্দা পান ইউইউ বলেন, “এটি চীনা মানুষের প্রাণীদের প্রতি গভীর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।” হেফেই বন্যপ্রাণী উদ্যানের জেনারেল ম্যানেজার ঝৌ লিলিয়াং জানান, দাঝুয়াং ও তার পরিবারের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ এবং পর্যটকদের আগমনে যাতে তাদের উপর চাপ না পড়ে, সে ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।