Home First Lead গৃহঋণে ব্যাংকের ৫ ফাঁদ: বাড়ির স্বপ্নে যেন দুঃস্বপ্ন না নামে

গৃহঋণে ব্যাংকের ৫ ফাঁদ: বাড়ির স্বপ্নে যেন দুঃস্বপ্ন না নামে

ছবি: এআই

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: নিজের বাড়ি বানানো অনেকের আজন্ম স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণে ব্যাংক থেকে গৃহঋণ নেওয়ার চিন্তা স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে এই ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সময় স্বপ্ন নয়, দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। নানা গোপন শর্ত, লুকানো খরচ, এবং জটিল চুক্তির মাধ্যমে ব্যাংক অনেক সময় ঋণগ্রহীতাকে আর্থিক ফাঁদে ফেলতে পারে।

প্রথম ফাঁদ: সুদের হার নিয়ে বিভ্রান্তি
অনেক ব্যাংক বিজ্ঞাপনে বলে থাকে “সর্বনিম্ন সুদে গৃহঋণ”। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেখানে প্রাথমিক কয়েক মাসের জন্য কম সুদের হার প্রযোজ্য হয়, যাকে বলে টিজার রেট। এরপর হঠাৎ করেই সুদের হার বেড়ে যায়। ঋণগ্রহীতা যখন এই বৃদ্ধির বিষয়টি বুঝতে পারেন, ততদিনে চুক্তিতে সই শেষ।

দ্বিতীয় ফাঁদ: লুকানো খরচ
চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংক নানা ধরনের ফি কেটে নেয়। প্রসেসিং ফি, ভ্যালুয়েশন ফি, আইনি পরামর্শ ফি, ইন্স্যুরেন্স ফি ইত্যাদি। এসব ফি চূড়ান্ত ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব খরচ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় না।

তৃতীয় ফাঁদ: চুক্তির জটিলতা
গৃহঋণের চুক্তিপত্র অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে জটিল ভাষায় লেখা হয়। সাধারণ মানুষ এসব শর্ত বোঝে না, ফলে একচেটিয়া সুবিধা পায় ব্যাংক। যেমন: সময়মতো কিস্তি না দিতে পারলে ব্যাংক সহজেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে, এমন শর্তও লুকিয়ে থাকে।

চতুর্থ ফাঁদ: ঋণের সময় বাড়িয়ে সুদের বোঝা বাড়ানো
ব্যাংক অনেক সময় ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়, যেন মাসিক কিস্তি কম মনে হয়। এতে মাসে মাসে খরচ কম হলেও দীর্ঘমেয়াদে মোট সুদের পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণ। উদাহরণস্বরূপ, ২০ লাখ টাকার ঋণ ১৫ বছর মেয়াদি হলে আপনি ফেরত দেবেন প্রায় ৩৫ লাখ টাকা!

পঞ্চম ফাঁদ: অসম্পূর্ণ কাগজপত্রে ঋণ অনুমোদন
কিছু ব্যাংক দ্রুত ঋণ অনুমোদনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই না করেই ঋণ দেয়। পরবর্তীতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়। জমির কাগজপত্র, দালালদের প্রতারণা কিংবা প্রকল্প বাতিল- এসব ঝুঁকির ভার তখন পড়ে পুরোপুরি ঋণগ্রহীতার ওপর।

বিশেষ সতর্কতা: দালাল চক্রের ফাঁদ
অনেক সময় ব্যাংকের ‘পরামর্শদাতা’ পরিচয়ে কিছু দালাল মাঝপথে ঢুকে পড়ে। তারা ঘুষ খেয়ে ঋণ অনুমোদনে সাহায্য করার প্রলোভন দেখায়। পরে দেখা যায়, অতিরিক্ত কমিশন ও ঘুষের কারণে ঋণ প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।

করণীয় কী?
১. ঋণ নেওয়ার আগে সব শর্ত বিস্তারিত পড়ে নিন।
২. সুদের ধরন ফিক্সড না ভ্যারিয়েবল তা জেনে নিন।
৩. চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ব্যাংকের নিরপেক্ষ আইনি পরামর্শ নিন।
৪. কোন লুকানো খরচ আছে কিনা তা নিশ্চিত হোন।
৫. ঋণ মঞ্জুরি পত্র (স্যানশন লেটার) ভালোভাবে যাচাই করুন।
৬. দালালদের প্রলোভন এড়িয়ে সরাসরি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

নিজের স্বপ্নের ঠিকানা গড়তে গিয়ে যেন প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন, সে জন্যই সচেতনতা জরুরি।