গৃহকর্মী আয়েশা দম্পতি গ্রেপ্তার
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে চাঞ্চল্যকর মা ও মেয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার প্রায় ৬০ ঘণ্টার মাথায় হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো ছবি বা পরিচয়পত্র না থাকায় মামলাটি ‘ক্লুলেস’ মনে হলেও, তদন্তকারীদের বিচক্ষণতায় এবং পুরনো মামলার সূত্র ধরে আসামিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। এর আগে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
যেভাবে মিলল সূত্র
পুলিশ জানায়, গত ৮ ডিসেম্বর সকালে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যার পর বাসা থেকে পালিয়ে যায় গৃহকর্মী আয়েশা। কিন্তু তার কোনো ছবি, এনআইডি বা মোবাইল নম্বর বাড়ির মালিকের কাছে সংরক্ষিত ছিল না। এমনকি সিসিটিভি ফুটেজেও বোরকা পরা থাকায় তাকে চেনা যাচ্ছিল না।
কোনো ডিজিটাল ক্লু না পেয়ে তদন্তকারীরা ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে তদন্ত শুরু করেন। গত এক বছরে মোহাম্মদপুর থানায় গৃহকর্মী কর্তৃক চুরির ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান। সেটি হলো—আসামির গলায় ‘পোড়া দাগ’ এবং তার আবাসস্থল জেনেভা ক্যাম্প। এই বর্ণনার সঙ্গে বর্তমান আসামির মিল খুঁজে পান তারা। এরপর হুমায়ুন রোডের একটি চুরির ঘটনার সূত্র ধরে পুরনো একটি মোবাইল নম্বর উদ্ধার করা হয়। সেই নম্বরের সূত্র ধরেই হেমায়েতপুর ও পরবর্তীতে ঝালকাঠিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আয়েশা। পুলিশ জানায়, আয়েশা কাজে যোগ দেয়ার দ্বিতীয় দিনেই ২ হাজার টাকা চুরি করে। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার তর্ক হয়। চতুর্থ দিন সে সঙ্গে করে একটি ‘সুইচ গিয়ার চাকু’ নিয়ে আসে। চুরির বিষয়ে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ তার স্বামীকে ফোন করার চেষ্টা করলে পেছন থেকে তাকে ছুরিকাঘাত করে আয়েশা।
মায়ের চিৎকার শুনে মেয়ে নাফিসা বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা তার ছিঁড়ে ফেলে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়।
পালানোর কৌশল
হত্যাকাণ্ডের পর আয়েশা নিজের রক্তমাখা কাপড় বদলে নিহত স্কুলছাত্রী নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়। পালানোর সময় সঙ্গে নেয় ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় পোশাক পরিবর্তন করে এবং ঢাকা ছাড়ার সময় সিংগাইর ব্রিজ থেকে মোবাইল ও রক্তমাখা কাপড় নদীতে ফেলে দেয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে চুরি করা ল্যাপটপটি উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের সতর্কতা
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, আয়েশা পেশাদার চোর। এর আগেও সে তার বোনের বাসা থেকে টাকা ও গয়না চুরি করেছিল। তিনি নগরবাসীকে সতর্ক করে বলেন, ‘বাসায় গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহে রাখবেন। কারণ এর সঙ্গে আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তা জড়িত।’










