বিএফএসএ-এর সতর্কতা
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জনপ্রিয় খাদ্যদ্রব্য ‘গোলাপজল’ ও ‘কেওড়া জল’ )-এর নামে বাজারে বিক্রি হওয়া সুগন্ধি বা ফ্লেভারগুলিতে কিডনি ডায়ালাইসিসে ব্যবহৃত অননুমোদিত রাসায়নিকের সন্ধান পাওয়ায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এক জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। কর্তৃপক্ষের এই বিজ্ঞপ্তি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং খাদ্যে ভেজালকারীদের প্রতারণার কৌশল নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বিভ্রান্তিকর লেবেলিং ও প্রতারণার কৌশল
সাম্প্রতিক বাজার অভিযানে দেখা গেছে, অসাধু উৎপাদনকারীরা ‘খাবার উপযোগী’, ‘ফুড গ্রেড’, ‘আইন অনুসারে প্রস্তুতকৃত’, ‘ভেজিটেরিয়ান খাদ্য মর্মে সবুজ টিক’ ইত্যাদি অতি-আকর্ষণীয় এবং বিভ্রান্তিকর লেবেল ব্যবহার করে এই সুগন্ধিগুলো বাজারজাত করছে। তবে, প্যাকেটের ভেতরে উপাদান হিসেবে কেবল বিশুদ্ধ পানি ও ‘ফ্লেভার’ উল্লেখ করা হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, এই সুগন্ধিগুলোতে ব্যবহৃত উপাদানের উৎস বা প্রকৃতি সঠিকভাবে লেবেলিং করা হচ্ছে না, যা খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩-এর ২৯, ৩১ ও ৩২ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিপজ্জনক রাসায়নিকের ব্যবহার: ‘ডায়ালাইট-এ’-এর সন্ধান
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, গোলাপজল ও কেওড়া জলের উৎপাদনকারী বেশ কিছু কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় অননুমোদিত রাসায়নিকের ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, কিছু ক্ষেত্রে সুগন্ধি প্রস্তুত করতে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক, যেমন- ‘ডায়ালাইট-এ’ (Dialyte-A)-এর মতো উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। খাদ্যপণ্যে একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের এই ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে।
নিয়ম লঙ্ঘনের চিত্র
প্যাকেজড ফুড লেবেলিং প্রবিধানমালা, ২০১৭ অনুযায়ী, খাদ্যে ব্যবহৃত সকল সুগন্ধিকে অবশ্যই “অনুমোদিত প্রাকৃতিক”, “অনুমোদিত কৃত্রিম” অথবা “অনুমোদিত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম” সুগন্ধি হিসেবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও, সুগন্ধি দ্রব্যের সাধারণ নাম এবং আইসক্রিম বা পানীয়ের মতো প্রযোজ্য ক্ষেত্র উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাজারে প্রচলিত এই সুগন্ধিগুলো কোনো প্রকার নিয়ম মানছে না এবং লেবেলিং-এর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অস্বচ্ছতা বজায় রাখছে।
খাদ্য সরবরাহকারীদের প্রতি নির্দেশনা
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এই ধরনের অননুমোদিত সুগন্ধি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ থেকে বিরত থাকার জন্য ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি, সকল খাদ্য প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী, যেমন – রেস্টুরেন্ট, বেকারি, কমিউনিটি সেন্টার এবং ক্যাটারিং সার্ভিস সহ সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন কোনো সুগন্ধি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রবিধানমালা অনুসারে সুগন্ধি তৈরির রাসায়নিক উপাদান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বহুল প্রচলিত এই সুগন্ধিগুলোতে কিডনি ডায়ালাইসিসের রাসায়নিকের মতো বিপজ্জনক উপকরণের ব্যবহার একটি বৃহত্তর খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে। এই ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে নিয়মিত এবং কঠোর অভিযান পরিচালনা করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনসাধারণকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর লেবেলিং বিহীন সুগন্ধি পণ্য খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা বা ক্রয় করা থেকে বিরত থাকার জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত পরামর্শ দিয়েছে।










