বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। দিনভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হয়েছে কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা। সকাল থেকেই মানুষ যার যার পশু কোরবানি দিয়ে ভাগ করে নিয়েছেন তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মধ্যে। তবে কোরবানির দিন চট্টগ্রাম শহরের কিছু এলাকায় যে চিত্র চোখে পড়ে, তা ঈদের রীতি-রেওয়াজের বাইরেও এক বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে।
নতুন ব্রিজ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, চাক্তাই ও আগ্রাবাদ এলাকার মোড়ে মোড়ে বিকেল থেকেই বসেছে অঘোষিত ‘গোশতের হাট’। ভিক্ষুক, দরিদ্র পরিবার কিংবা গোশত কাটাকুটি ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত দিনমজুররা যে গোশত পেয়েছেন, তা অনেকেই ঘরে না নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন নগদ অর্থের আশায়।
এই গোশতের কেজি প্রতি দাম তুলনামূলক অনেক কম। কেউ বিক্রি করছেন ২৫০ টাকা কেজি, কেউ আবার একটু ভালো মানের হলে ৩০০ টাকাও হাঁকছেন। ক্রেতাদের মধ্যেও রয়েছে নানান শ্রেণির মানুষ। অনেকেই কোরবানি দিতে পারেননি বা কোরবানির সক্ষমতা নেই, তারাও সন্তান-পরিবারের মুখে ঈদের দিন গোশত তুলে দিতে কিনে নিচ্ছেন এসব কমদামের মাংস। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘নিজে কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়ের মুখে অন্তত মাংস তুলে দিতে পারছি এভাবে।’’
তবে সবচেয়ে চাহিদা রাখছে হোটেল মালিকরা। ছোট-বড় খাবার হোটেলের অনেক মালিক নগদে তুলনামূলক কমদামে এসব গোশত কিনে নিচ্ছেন কেজির পর কেজি। ফ্রিজ ভর্তি করে পরে সপ্তাহখানেক চালানোর জন্য সংরক্ষণ করছেন তারা। ঈদের দিনেই কেনার কারণ জানতে চাইলে এক হোটেল মালিক জানান, ‘‘ঈদের দিনে মাংসের দাম কম থাকে। পরে বাজারে এই মাংস কিনতে গেলে অনেক বেশি দাম পড়ে। তাই এখনই মজুদ করে রাখি।’’
এভাবে ঈদের গোশত অনানুষ্ঠানিক হাটে কেনাবেচা হয়ে ওঠে এক প্রকার ‘ঈদ-অর্থনীতি’র চেহারা। কেউ নগদ অর্থের প্রয়োজনেই বিক্রি করছেন, কেউ নিজের সাধ মেটাচ্ছেন কম খরচে, আবার কেউ ব্যবসার খাতিরেই এই সুযোগ নিচ্ছেন। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এমন ব্যবস্থার নৈতিকতা নিয়ে। অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করেন, কোরবানির গোশতের বণ্টনের পেছনে যে ত্যাগ ও দানের মহৎ চেতনা, তা এই বেচাকেনার প্রবণতায় কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে যায়।
তবুও, বাস্তবতার নিরিখে অনেকেই এই ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে ঈদের দিনে কিছু নগদ আয় মানে এক ধরনের স্বস্তি ও বেঁচে থাকার উপায়।