Home আবহাওয়া ছ’বছরে প্রথম প্রাক বর্ষা মরশুমে ঘূর্ণিঝড়হীন বঙ্গোপসাগর

ছ’বছরে প্রথম প্রাক বর্ষা মরশুমে ঘূর্ণিঝড়হীন বঙ্গোপসাগর

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:

বঙ্গোপসাগরে চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে কোনও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। প্রাক বর্ষা মরশুমে এমন পরিস্থিতি ছ’বছরে এই প্রথম। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এই সময় কোনও ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়নি। তার পর থেকে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়েছে। তার জেরে ওড়িশা, অন্ধ্র, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির নজির রয়েছে।

প্রাক বর্ষার সময় ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’, ‘উম-পুন’, ‘যশ’-এর মতো ঝড়গুলি রাজ্যে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। তবে এবছর শুধু বঙ্গোপসাগর নয়, আরব সাগরেও কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়নি, যা আরও বিরল বলে মত আবহাওয়াবিদদের।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা  পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ২০২৫ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে এবং এই সময়ের মধ্যে অন্তত একটি বছর ২০২৪ সালের রেকর্ড তাপমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেএছাড়া, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর  ও এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, গত দুই দশকে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব বেড়েছে, যা মহারাষ্ট্রের কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে

আবহাওয়াবিদদের মতে, এবছর মৌসুমি বায়ুর আগমন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগে হওয়ায়, এটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ নষ্ট করেছে। বিশেষ করে, অতিগভীর নিম্নচাপগুলি উপকূলের খুব কাছে এসে তৈরি হওয়ায়, সেগুলি সাগর থেকে প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করতে পারেনি, ফলে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারেনি

বঙ্গোপসাগরে প্রাক বর্ষা মরশুমে ঘূর্ণিঝড় না হওয়া একটি বিরল ঘটনা হলেও, এটি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক নয়। তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও মৌসুমি বায়ুর আগমন সময়ের পরিবর্তন এই পরিস্থিতির পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। আবহাওয়াবিদরা এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করছেন।

এদিকে চলতি বছরে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে একাধিক অতিগভীর নিম্নচাপ দেখা দিয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড়ের এক ধাপ আগের পর্যায়। এই নিম্নচাপগুলি উপকূল অতিক্রম করেছে, তবে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়নি। আবহাওয়াবিদদের মতে, মৌসুমি বায়ুর সময়মতো প্রবেশ এই নিম্নচাপগুলিকে আরও শক্তিশালী হতে দেয়নি। উপকূলের একেবারে কাছাকাছি এসে নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ায় সেগুলির শক্তি সঞ্চয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্প সাগর থেকে টানার সুযোগ কমে যায়।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোনও বছর ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, তো কোনও বছর একটিও নয়—এই বৈপরীত্য আবহাওয়ার নতুন বাস্তবতা হয়ে উঠছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।