Home কক্সবাজার চকরিয়ায় বাসায় ঢুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত পারভেজ গ্রেপ্তার

চকরিয়ায় বাসায় ঢুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত পারভেজ গ্রেপ্তার

মো. পারভেজ ওরফে আবুল কালাম
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চকরিয়া (কক্সবাজার):  গভীর রাতে জানালা দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে ঘরে ঢুকে পড়ে এক মুখোশধারী ব্যক্তি। ঘুমন্ত নারী ও তার ছোট সন্তানদের সামনে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখায়, মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়, এবং এরপর পুলিশ সদস্যের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা কেবল একটি গৃহে চুরির ঘটনা নয়, এটি এক ভয়াবহ সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার প্রতিচ্ছবি।

এই নারকীয় ঘটনার কয়েকদিন পর, বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে পুলিশ চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করে মো. পারভেজ ওরফে আবুল কালাম (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে। কিন্তু তদন্তে জানা গেল, চুরির আড়ালে লুকিয়ে ছিল আরও নৃশংস এক অপরাধ, পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে ধর্ষণ।

অভিযুক্তের পরিচয় ও পটভূমি

গ্রেপ্তার হওয়া পারভেজের স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মগবাজার খামারপাড়া এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত মেহের আলী। বর্তমানে তিনি বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজারের মেম্বারপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, পুলিশ অ্যাসল্টসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং একাধিক বিয়ের আশ্রয় নেন। এতে সন্দেহ এড়াতে সক্ষম হলেও শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তির কাছে হেরে যান।

ঘটনার বর্ণনা

১৫ জুলাই রাত তিনটার দিকে চকরিয়া পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ভাড়া বাসায় মুখোশ পরে প্রবেশ করে পারভেজ। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে ঘরে ঢোকে সে। বাসাটিতে পুলিশের এক কনস্টেবলের স্ত্রী দুই সন্তানসহ বসবাস করতেন। ঘটনার সময় তার স্বামী কর্মস্থলে ছিলেন।

ভেতরে ঢুকে ভিকটিমকে ছুুরির ভয় দেখিয়ে দুটি মোবাইল ফোন ও আড়াই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় পারভেজ। এরপর শিশুদের সামনেই ওই নারীকে ধর্ষণ করে। সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতার পর, সাহস করে পরদিন থানায় যান ভিকটিমের স্বামী এবং  মামলা দায়ের করেন।

তদন্তের গতিপথ

চুরি মামলায় গ্রেপ্তারের পর পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পারভেজের মোবাইল কললিস্ট, অবস্থান তথ্য ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয় যে, পারভেজই ওই রাতে বাসায় ঢুকে ধর্ষণ করেছে। এরপর ভিকটিম থানায় গিয়ে সরাসরি পারভেজকে শনাক্ত করেন।

চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিৎ দাস বলেন, আগের একটি মামলার সূত্র ধরে পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের বিষয়টি তদন্তেই সামনে আসে। এরপর তাকে আদালতে তোলা হয় এবং পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে।

মানবিক দৃষ্টিকোণ

এই ঘটনার শিকার নারী শুধু একজন ভিকটিম নন, বরং সমাজের প্রতিটি ঘরের আতঙ্কের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের পরিবারেও যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? এই প্রশ্ন এখন অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

এই ধর্ষণের ঘটনা একটি বার্তা দেয়—নারী নির্যাতন, বিশেষ করে নিরাপদ ভাবা বাসার ভেতরেও, কেমন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ভুক্তভোগী পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে, বিশেষ করে ছোট দুই শিশুর সামনে ঘটে যাওয়া এই লোমহর্ষক ঘটনা তাদের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি

বৃহস্পতিবার দুপুরে পারভেজকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করছে, এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরায় না ঘটে, সেজন্য তারা আরও তৎপর থাকবে। তবে এ ঘটনাটি সমাজের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।