বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: মধুমাস জ্যৈষ্ঠ মানেই বাংলার রসালো ফলের মৌসুম। এ সময় প্রকৃতি যেমন রুদ্ররূপে উঠে আসে, তেমনি তার কোলে জন্ম নেয় শতরকম সুস্বাদু ফল। সেই ঐতিহ্যই যেন ফিরেছে চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে। নগরের আমিন জুট, বাদুরতলা, কোতোয়ালী, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, পাহাড়তলী, বহদ্দারহাট, কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন ফলের পাইকারি বাজার—সবখানেই এখন চলছে লিচু, আম, কাঁঠাল আর জামের উৎসব।
ফলের দোকানগুলোয় চোখ মেললেই দেখা যাচ্ছে আমের স্তূপ। রাজশাহী, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, নওগাঁ ও মেহেরপুরের বিভিন্ন বাগান থেকে আগত আমে বাজার ছেয়ে গেছে। গোপালভোগ, হিমসাগর, লক্ষণভোগ, আম্রপালি নানান জাতের আম রসালো গন্ধ ছড়াচ্ছে। নগরের বদর মোকাম ফলপট্টিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৩০ থেকে ১৬০ টাকায়, হিমসাগর ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। চট্টগ্রাম শহরের ভোক্তারা যেমন খুশি, তেমনি বিক্রেতারাও সন্তুষ্ট।
লিচুর মৌসুমেও পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম। বাঁশখালি, দিনাজপুর ও রাজশাহী থেকে প্রতিদিন আসছে ঝাঁকঝাঁক লিচু। রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক বিক্রেতা জানালেন, ‘ভোরবেলা ট্রাক থেকে মাল নামিয়ে বিকেলেই সব শেষ হয়ে যায়।’ চলতি বাজারে প্রতি শত লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে, জাত ও আকারভেদে দামের পার্থক্য থাকলেও লিচুর রসালো স্বাদে মুগ্ধ সবাই।
পাহাড়তলী ও বহদ্দারহাট এলাকার বাজারে প্রচুর দেখা যাচ্ছে কাঁঠাল। ছোট-বড় নানা আকারের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়। সেগুলোর অধিকাংশই এসেছে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান পাহাড়ি অঞ্চল থেকে। দোকানের সামনেই কাঁঠাল চেখে দেখছেন ক্রেতারা, অনেকেই কিনছেন ভাগ করে। তীব্র গরমে শরীর শীতল রাখতে কাঁঠাল এখন অনেকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।
জামও এখন বাজারে এসেছে। চকবাজার, কাতালগঞ্জ, নতুন ব্রিজ এলাকায় জাম বিক্রি হচ্ছে গামলায় ভরা অবস্থায়। গাঢ় বেগুনি এই ফল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি দরে। যদিও চাহিদা তুলনায় জোগান কিছুটা কম, তবে শহরবাসীর আগ্রহে ঘাটতি টের পাওয়া যাচ্ছে না।
স্টেশন রোডের এক ফলের আড়তদার বললেন, ‘এই সময়টাই আমাদের সবচেয়ে ব্যস্ত মৌসুম। ফল দ্রুত বিক্রি হয়, লাভও ভালো হয়। তবে গরমে ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে, তাই ঠান্ডা ঘর আর দ্রুত বিক্রিতে ভরসা রাখতে হয়।’
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, মধুমাসে পাওয়া এই দেশি ফলগুলোতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে, পানিশূন্যতা দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
চট্টগ্রামে জ্যৈষ্ঠের এই সময়টা যেন শুধু ফল কেনাবেচার বাজার নয়, বরং বাঙালির রসনাতৃপ্তির এক উৎসব। প্রতিটি কেজি আম, প্রতিটি ঝাঁক লিচু আর প্রতিটি কাঁঠালে মিশে আছে মাটির ঘ্রাণ, মৌসুমি স্মৃতি আর প্রাকৃতিক মাধুর্য। মধুমাস জ্যৈষ্ঠ তাই চট্টগ্রামে শুধু একটি মাস নয় এ যেন এক রসালো আনন্দযজ্ঞ।