Home চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম-১৩: শত্রুর শত্রু যখন মিত্র, বিএনপির বাক্সে আ.লীগের ভোট!

চট্টগ্রাম-১৩: শত্রুর শত্রু যখন মিত্র, বিএনপির বাক্সে আ.লীগের ভোট!

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, আনোয়ারা ( চট্টগ্রাম ): জাতীয় নির্বাচনের হাওয়ায় সরগরম চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসন। অতীতে এই আসনটিতে মূলত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকলেও, এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় নির্বাচনী মাঠের দৃশ্যপট নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে মাঠ ফাঁকা, কিন্তু ভোটের হিসাব-নিকাশে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে নিষিদ্ধ দলটির বিশাল ভোটব্যাংক। এই আসনের লড়াই এখন মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে হলেও, জয়-পরাজয়ের চাবিকাঠি চলে গেছে আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থকদের হাতে। আর সেখানেই আদর্শিক কারণে জামায়াতের চেয়ে বিএনপিকে ‘কাছের’ মনে করছেন এই ভোটাররা।

আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনে ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। দলটির হেভিওয়েট প্রার্থী ও একাধিকবারের সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম এবারও ধানের শীষের প্রার্থী। অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের জোট রাজনীতির সমীকরণ ভেঙে এবার আলাদাভাবে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির হয়ে লড়ছেন অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।

মাঠ পর্যায়ের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলেও তাদের বিশাল কর্মী-সমর্থক ও ভোটব্যাংক এই আসনে বিদ্যমান। নিজেদের প্রার্থী না থাকায় এই ভোটাররা এখন বিকল্প খুঁজছেন। স্থানীয় সূত্র ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থকরা জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিতে নারাজ। তাদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদার আওয়ামী লীগের সমর্থকরা জামায়াতকে আদর্শিক জায়গা থেকে মেনে নিতে পারেন না। সেই তুলনায় বিএনপি তাদের কাছে ‘মন্দের ভালো’ বা কিছুটা গ্রহণযোগ্য শক্তি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ সমর্থক বলেন, “আমাদের দল নিষিদ্ধ, প্রার্থী নেই। কিন্তু ভোট তো দেব। জামায়াত আর বিএনপির মধ্যে তুলনা করলে বিএনপিই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। অন্তত তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্বীকার করে। তাই আমাদের ভোট ধানের শীষেই যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই সমীকরণটি বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজামের জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দিচ্ছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে যারা বিএনপির ঘোর বিরোধী ছিলেন, তারাই এবার জামায়াত ঠেকাতে বিএনপির বাক্সে ভোট ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে বিএনপির নিজস্ব ভোটব্যাংকের সাথে আওয়ামী লীগের ‘এন্টি-জামায়াত’ ভোট যুক্ত হয়ে সরওয়ার জামাল নিজামের পাল্লা অনেক ভারী হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান তার নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তি এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের ওপর ভর করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের এই বিশাল ভোটব্যাংক তার বিপক্ষে যাওয়ায় সেটি তার জয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

শেষ পর্যন্ত, ভোটের দিন আওয়ামী লীগের এই ‘নীরব’ ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে সিল মারলে, আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে বিএনপির বিজয় কেবল সময়ের ব্যাপার হতে পারে।