বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ কফিলউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আমি প্রত্যক্ষ করলাম এক ভয়াবহ দৃশ্য। সকালটা ছিল একেবারেই স্বাভাবিক, লোকজনের ব্যস্ত যাতায়াত, কলেজের সামনে কিশোরদের আড্ডা সব মিলিয়ে সাধারণ দিনের মতোই। কিন্তু সকাল সাড়ে আটটার কিছু পরেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। হঠাৎ করেই একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি খালে পড়ে যায়। মুহূর্তেই ভেতরের মানুষদের আর্তচিৎকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
খালে পড়ার কয়েক মিনিট পর বাসটি পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে যায়। চারপাশে শোরগোল কে কোথায় আছে, কজন বেঁচে আছে, কেউ জানে না। আমি দেখলাম স্থানীয়রা ঝাঁপিয়ে পড়লেন পানিতে, ভাঙচুর করতে লাগলেন বাসের জানালা। পুলিশের সাইরেন বাজতে শুরু করল, ফায়ার সার্ভিস ছুটে এল, সেনাবাহিনীও উদ্ধার কাজে যোগ দিল। তারপরও হতাশা ছিল—ডুবুরি দল আসতে দেরি করল। এই ফাঁকে বহু মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেল।
প্রথমে কয়েকজনকে জীবিত বের করা হলো। কেউ গুরুতর আহত, কেউ সামান্য চোট পেয়েছেন। চোখের সামনে দেখা গেল তিনজনকে নিথর দেহে টেনে আনা হলো পানির নিচ থেকে। মুহূর্তেই জনতার মধ্যে কান্নার রোল ওঠে। পরে খবর এলো, হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও দুজন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে পাঁচজনের প্রাণহানি নিশ্চিত হলো।
আমি দেখলাম, কলেজগেটের সামনে থেকে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজট, ট্রাক-বাস থেমে আছে। চালকদের মুখে বিরক্তি, যাত্রীদের মুখে আতঙ্ক। আবার স্থানীয়দের ক্ষোভও স্পষ্ট হয়ে উঠল—তাদের দাবি, সময়মতো উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হলে ক্ষয়ক্ষতি এতটা ভয়াবহ হতো না।
পুলিশের ওসি মো. ফয়েজুল আজীম নোমান আমাকে জানালেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বাসের বেপরোয়া গতিই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ। তিনি আরও বলেন, এখনো উদ্ধার কাজ চলছে, হতাহতের সংখ্যা বাড়তেও পারে।
এই দুর্ঘটনা শুধু পাঁচটি প্রাণ কেড়ে নিল না, অসংখ্য পরিবারকে শোকের সাগরে ডুবিয়ে দিল। যাত্রীদের আতঙ্কিত মুখ, স্বজনদের কান্না আর স্থানীয়দের ক্ষোভ—সব মিলিয়ে চন্দ্রগঞ্জের সকালটা যেন এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো।