বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে দারোয়ান কর্তৃক মারধর ও হেনস্থার অভিযোগকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন শাহাবুদ্দিন ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী রাত ১১টা ২০ মিনিটে বাসায় ফেরেন। গেট বন্ধ থাকায় তিনি অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেন। পরে রুমমেটরা জোরাজুরি করে দরজা খোলালে দারোয়ান ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীকে মারধর করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদে নামেন।
এ সময় পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। স্থানীয়রা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে লোকজন জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। অপরদিকে শিক্ষার্থীরাও সোহরাওয়ার্দী হলের মসজিদের মাইক ব্যবহার করে সমবেত হন।
সংঘর্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আহতদের মধ্যে আরবি বিভাগের ফুয়াদ হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শাওন, ইতিহাস বিভাগের তাহসান হাবিব, লোকপ্রশাসন বিভাগের আশ্রাফ রাতুলসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে।
চবি মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, “মেডিকেলে একের পর এক আহত শিক্ষার্থী আসতে থাকে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয় এবং শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ জানান, রাত ১২টার দিকে একাধিক নিরাপত্তা টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হলেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকায় সমন্বয় কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত উপস্থিতি না থাকায় পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
প্রক্টোরিয়াল বডি, পুলিশের টহলগাড়ি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহনে হামলার ঘটনাও ঘটে। নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সদস্য ও সহকারী প্রক্টর কুরবান আলী ও নাজমুলসহ কয়েকজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন এখনো উত্তপ্ত এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।