বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চাঁদপুর: চাঁদপুর বাংলাদেশের একমাত্র জেলা যেখানে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া, এই তিনটি প্রধান নদী মিলিত হয়েছে। এই মিলনস্থলকে ঘিরে চাঁদপুরে গড়ে উঠেছে অনন্য জলভিত্তিক প্রকৃতি, যাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পর্যটনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। তবে সম্ভাবনা যেমন উজ্জ্বল, তেমনি রয়েছে বাস্তব বাধা।
চাঁদপুর শহরের দাড়ি মোড়, বড়স্টেশন নদীরপাড়, মোলহেড এবং আশপাশের বিভিন্ন পয়েন্টে যেসব পর্যটক ভিড় করেন তারা মূলত নদীর মিলনস্থলের ঢেউ, সূর্যাস্ত, নদীপথের গতিময়তা এবং ইলিশকেন্দ্রিক স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করতে আসেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ভ্রমণসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা বলছেন, পর্যটকদের সংখ্যা বছর বছর বাড়লেও অবকাঠামো এখনো সেই মানে পৌঁছায়নি। নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন নদীরপাড়, পর্যাপ্ত বসার জায়গা এবং মানসম্মত রেস্তোরাঁ সুবিধা আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।
পর্যটন খাতের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা হলো নদীকেন্দ্রিক ক্রুজ ট্যুরিজম। চাঁদপুর থেকে চরাঞ্চল, হাইমচর, মতলব বা বৃহত্তর পদ্মা-মেঘনার বিভিন্ন অংশে ছোট ক্রুজ বা বোট সাফারি চালু হলে দেশি–বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে কয়েকটি ছোট উদ্যোগ দেখা গেলেও সেগুলো এখনো নিয়মিত ও বাণিজ্যিক পরিসরে বিকশিত হয়নি।
চাঁদপুরে পর্যটন সম্ভাবনা বাড়াতে স্থানীয় হোটেল-মোটেল খাতকে আরও আধুনিকায়নের প্রয়োজন রয়েছে। শহরে মাঝারি মানের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও আন্তর্জাতিক মানের আবাসন সুবিধা সীমিত। অনেক পর্যটক দিনের শেষে অন্য জেলায় ফিরে যেতে বাধ্য হন।
পর্যটন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাঁদপুরে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হলে নদীকেন্দ্রিক বিনোদন, জলক্রীড়া, নিরাপদ ভ্রমণ, খাবারদাবারের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে একটি স্থায়ী পর্যটন শিল্প দাঁড় করানো সম্ভব। জেলা প্রশাসনও ধাপে ধাপে নদীরপাড় উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে তৈরি এবং পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
পর্যটকদের নিরাপত্তা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী, লাইফ জ্যাকেটের সংকট এবং নদীর স্রোতের তীব্রতা নিয়ে সবার সতর্কতা প্রয়োজন। এ নিয়ে নৌপুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন একাধিক তদারকির উদ্যোগ নিয়েছে, যদিও এগুলো আরও শক্তিশালী করার দাবি রয়েছে।
চাঁদপুর জেলার মানুষের প্রত্যাশা, দীর্ঘদিনের নদীভিত্তিক ঐতিহ্য ও ইলিশের খ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে এখানে একটি আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। পরিকল্পিত বিনিয়োগ, পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন এবং নিরাপদ ভ্রমণব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে চাঁদপুর হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান জলভিত্তিক পর্যটন গন্তব্য।










