Home Third Lead হাত বদলেছে, চাঁদাবাজি নয়: ঢাকার বাস টার্মিনালে ভয়াবহ চিত্র

হাত বদলেছে, চাঁদাবাজি নয়: ঢাকার বাস টার্মিনালে ভয়াবহ চিত্র

ছবি এ আই

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনের অবসান হয়েছে, পরিবর্তন এসেছে রাজনীতির মাঠে। কিন্তু রাজধানীর পরিবহন টার্মিনালগুলোতে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি বদলায়নি, শুধু পরিবর্তন হয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী চক্র। এখন টার্মিনালে ‘টোকেন রাজত্ব’ পরিচালনা করছে নতুন এক গোষ্ঠী, যাদের শিকড় নতুন রাজনৈতিক ছায়ায় বেড়ে উঠছে।

রাজধানীর সায়দাবাদ, মহাখালী, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, গাবতলীসহ অন্তত ৯৫টি বাস টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডে প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবহন থেকে আদায় করা হচ্ছে অবৈধ চাঁদা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এক গোপন তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ সব তথ্য যেখানে বাস, ট্রাক, পিকআপ, হিউম্যান হলার এমনকি রিকশা থেকেও চাঁদা আদায় হচ্ছে একাধিক অজুহাতে।

‘চাঁদা নয়, পরিচয়পত্র ফি’ কথার মারপ্যাঁচ:

গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া টার্মিনালের একাধিক শ্রমিকের ভাষ্য, সেখানে কোনো বৈধ কমিটি নেই। অথচ প্রতিদিন বাসপ্রতি ৭০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে একটি চক্র। চালক ও হেলপারদের পরিচয়পত্র দেওয়ার নামে নেওয়া হচ্ছে আরও ৯০০ টাকা। মোট দেড় হাজার বাস থেকে আদায় করা হচ্ছে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা।

তবে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আবুল কাশেম এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন। পরিচয়পত্র বাবদ কিছু টাকা নেওয়া হচ্ছে মাত্র।”

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলমও বলেন, “প্রতি বাস থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা তোলা হয়। ৭০০ টাকার অভিযোগ বিভ্রান্তিকর।”

কিন্তু সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রিপোর্ট বলছে ভিন্ন কথা। তদন্তে উঠে এসেছে, অন্তত ১১ ধরনের ফি’র নামে চালু রয়েছে চাঁদা সংগ্রহের এক বিস্তৃত ‘অর্থনৈতিক সিস্টেম’। সিটি করপোরেশন, টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ফান্ড, পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, এমনকি চালক-হেলপার পরিচয়পত্র পর্যন্ত সব কিছুই চাঁদার অজুহাত।

হাত বদলের পরও পুরনো সংস্কৃতির ছায়া

অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের সরকারের সময় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের মাধ্যমে টোকেন ব্যবস্থায় চাঁদা তোলা হতো। এখন সেই ব্যবস্থার দখল নিয়েছে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নতুন এক চক্র। চাঁদার টোকেনের ব্যবহার কমেছে, কিন্তু আদায় পদ্ধতি আগের মতোই রয়ে গেছে—অথচ এখন তা আরও বেপরোয়া।

সড়কের বিশৃঙ্খলার মূলে এই অর্থনৈতিক সন্ত্রাস

বাস মালিক ও চালকদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রতিদিন ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে অনেক পরিবহন বাড়তি ট্রিপ মারছে, যা বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনা এবং যাত্রীদের ওপর ভাড়া বাড়ানোর চাপ।

তারা বলছেন, “এই চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে না। পুলিশ প্রশাসন, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে রাজধানীর পরিবহন রুটগুলো যেন হয়ে উঠেছে অবৈধ অর্থসংগ্রহের চালু বাজার।”

সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জবাব চাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা কে দিচ্ছে এইসব চাঁদাবাজদের ছায়া?

আপনি কী ঢাকার পরিবহন খাতের এই চাঁদাবাজির অভিজ্ঞতার শিকার? আমাদের জানান আপনার কথা। রিপোর্ট পাঠান বা মতামত লিখুন কমেন্টে। শেয়ার করুন এই প্রতিবেদন, জানুক সবাই এই অন্ধকার চক্রের খবর।
📢 শেয়ার করুন: #চাঁদাবাজিমুক্তপরিবহন
কমেন্টে লিখুন: আপনি কী ভাবছেন?