Home ক্যারিয়ার শাওনের পথচলা: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রযুক্তির বিশ্বে

শাওনের পথচলা: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রযুক্তির বিশ্বে

প্রতীকী ছবি

চাকরি খোঁজা, জীবন গড়া – পর্ব ১

আমিরুল মোমেনিন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটি ক্লাসরুম। জানালার পাশে বসে শাওন হাসান চুপচাপ তাকিয়ে থাকতেন বাইরের দিকে। চারপাশে সহপাঠীদের সরকারি চাকরির প্রস্তুতির ব্যস্ততা, কেউ বিসিএস কোচিং করছে, কেউ আইবিএ ভর্তি পরীক্ষার পেছনে ছুটছে। অথচ শাওনের মনে তখন কেবল একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—এই ডিগ্রি শেষ হলে আসলে কী হবে?

শাওন বলছিলেন, “আমার পরিবার খুব গরিব না, আবার ধনীর ঘরেও জন্ম নেই। একটা চাকরি দরকার ছিল, যাতে আমি অন্তত নিজের খরচটা নিজে চালাতে পারি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ঠিক কী করব।”

২০২৩ সালের মাঝামাঝি, অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষে শাওনের হাতে সময় ছিল। এই সময়টা সে কাজে লাগাতে চেয়েছিল ভিন্নভাবে। একদিন হঠাৎ ইউটিউবে চোখে পড়ে এক ভিডিও “ডেটা অ্যানালাইসিস শিখে ক্যারিয়ার গড়ুন”। তখনই মাথায় খেলে যায় প্রশ্ন এই তো, এটাই তো শিখতে পারি।

ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে সে জানতে পারল, ডেটা অ্যানালাইসিস মানে বড় বড় তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করা, যার প্রয়োগ আছে ব্যবসা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রায় সবক্ষেত্রে। তখনই সে শুরু করে ইউটিউব থেকে শেখা। ধাপে ধাপে শিখতে থাকে এক্সেল, গুগল শিটস, আর পরবর্তীতে পাইথনের প্রাথমিক ব্যবহার। পরবর্তী ধাপে সে এনরোল করে এক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে, যেখানে কম খরচে প্র্যাকটিকাল প্রজেক্টসহ কোর্স করা যায়।

শাওনের ভাষায়, “প্রথম তিন মাস খুব কষ্ট হয়েছিল। প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে অনলাইন কনটেন্ট দেখতাম। মাঝে মাঝে হতাশ লাগত। মনে হতো, এত কিছু শিখে লাভ হবে কি?”

কিন্তু চতুর্থ মাসে এসে সে পেল প্রথম সুযোগ ঢাকার একটি ছোট রিসার্চ ফার্মে ইন্টার্নশিপ। তারা চেয়েছিল এমন কাউকে, যে এক্সেল আর সার্ভে ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে। ইন্টারভিউতে শাওনের আত্মবিশ্বাস আর শেখার ইচ্ছা দেখে তারা তাকে নিল। বিনা বেতনে শুরু হলেও, কাজের অভিজ্ঞতা ছিল দারুণ।

তিন মাসের মধ্যেই সেই ফার্মই তাকে মাসিক ২০ হাজার টাকায় পার্টটাইম অ্যানালিস্ট হিসেবে রাখে। এরপরের অধ্যায় আরও বিস্ময়কর। একদিন ফেসবুকের এক জব গ্রুপে সে দেখে একটি আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার কোম্পানি খুঁজছে রিমোট ডেটা অ্যানালিস্ট। সাহস করে আবেদন করে, আর তিন ধাপে ইন্টারভিউ দিয়ে পেয়ে যায় কাজটি।

আজ সে বাড়ি থেকেই কাজ করে, প্রতি মাসে গড়ে ৬০ হাজার টাকার বেশি আয় করে। কাজের পাশাপাশি সপ্তাহে দুদিন সে স্থানীয় তরুণদের শেখায় কীভাবে অনলাইন দক্ষতা শেখা যায়।

“চাকরি না পেয়ে কাঁদছিলাম এক সময়। এখন বুঝি, যদি সময়টাকে শিখতে কাজে লাগাই, জীবন একদিন পাল্টে যেতেই পারে,” বলছিলেন শাওন হাসিমুখে।


কী শিখবেন পাঠক?

  • শুধু ডিগ্রি নয়, সময়কে ব্যবহার করে দক্ষতা অর্জন জরুরি
  • অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ফ্রি রিসোর্স দিয়েও শুরু করা যায়
  • শাওনের মতো সাধারণ ছাত্রও হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক মানের পেশাজীবী