চাকরি খোঁজা, জীবন গড়া – পর্ব ৩
আমিরুল মোমেনিন: মেজবাহ উদ্দিনের গল্পটা আমাদের অনেকের মতোই। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি, তারপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। মেধাবী ছাত্র হিসেবেই সবাই চিনত। পরিবারে প্রথম প্রজন্মের উচ্চশিক্ষিত ছেলে তিনি। তাই সবার প্রত্যাশাও ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করলেই “ভালো একটা চাকরি” মিলবে।
স্নাতক শেষ করার পর মেজবাহ মোট ৪৭টি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। ছোট-বড় মিলিয়ে ২৩টা প্রাইভেট কোম্পানি, ১০টা এনজিও, ৭টা সংবাদমাধ্যম আর কিছু ব্যাংক। কিন্তু কোনো জায়গা থেকেই ডাক আসে না। কেউ সিভি দেখে না, কেউ ইন্টারভিউতে ডাকে না, কেউ শুধু বলে “আমরা যোগ্য প্রার্থীকে জানাব।”
“একসময় নিজেকেই ছোট মনে হতো,” মেজবাহ বলেন। “ভাবতাম, তাহলে এত পড়ালেখা করে কী লাভ হলো?”
ঠিক তখনই ইউটিউবে একদিন দেখে ফেলেন একটা ভিডিও ‘সিভি মানে শুধু সার্টিফিকেট না, নিজের দক্ষতার প্রমাণ।’
তখনই প্রথম বুঝলেন, তার সিভিতে যা লেখা আছে, তাতে নিজের সক্ষমতার কিছুই বোঝা যায় না। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজেকে নতুন করে গড়বেন।
তিনি একটা অনলাইন কোর্স করেন ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’ নিয়ে। তিন মাসের সেই কোর্স চলাকালীন সময়ে ফ্রি-তে কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেন। একপর্যায়ে নিজের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করেন, যেখানে কাজের নমুনা, অভিজ্ঞতা, ক্লায়েন্ট ফিডব্যাক সবকিছু একসাথে রাখেন।
মাত্র ছয় মাস পর একটি মাঝারি মানের সফটওয়্যার কোম্পানিতে ‘ডিজিটাল কনটেন্ট এক্সিকিউটিভ’ হিসেবে চাকরি পান। এখন কাজ করেন সৃজনশীল বিষয় নিয়ে, মাসে আয় করেন ৩৫ হাজার টাকা।
মেজবাহ বলেন, “আমি এখন বুঝি, সার্টিফিকেট দরকার, কিন্তু সেটাই সব নয়। কাজের দক্ষতা, যোগাযোগের ভাষা আর নিজের আত্মবিশ্বাস এসবই আসল মূলধন।”
🔍 পাঠকের জন্য শিক্ষা:
শুধু ডিগ্রি থাকলে চাকরি মিলবে না, দরকার প্রমাণযোগ্য দক্ষতা
ফ্রি কাজ করেও নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করা যায়
আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের দুর্বলতা বুঝতে পারলে গড়েও তোলা যায়