বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ঘেরা ক্যাম্পাসে আবারও বাজতে যাচ্ছে গণতন্ত্রের ডাক। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ফের অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বহুল প্রত্যাশিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। অক্টোবরের আকাশে শরতের সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, সেই সঙ্গে ভেসে আসছে নতুন প্রজন্মের উচ্ছ্বাস—কণ্ঠে, পোস্টারে, প্রচারে। যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি গাছপালা, প্রতিটি করিডর বলছে—“এবার ভোট, এবার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীর হাতে।”
আগামী ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এই ভোটযুদ্ধ। প্রায় ২৭ হাজার ৫১৮ জন শিক্ষার্থী ব্যালটের মাধ্যমে ঠিক করবেন তাদের প্রতিনিধি। শুধু সংখ্যা নয়, এ এক বিশাল আয়োজন—মোট ৪০টি পদে ভোট, যেখানে কেন্দ্রীয় সংসদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। আরও ৪৯৩ জন লড়ছেন ১৪টি হলে। একেকটা হল এখন রাজনৈতিক আবেগে উত্তাল, ব্যানার আর স্লোগানে মুখরিত।
নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি নিচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কতায়। পাঁচটি অনুষদ ভবনে গড়ে তোলা হচ্ছে ১৪টি ভোটকেন্দ্র, প্রায় ৭০০ বুথ—যেখানে প্রতিটি বুথে ভোট দেবেন চার-পাঁচশত শিক্ষার্থী। ব্যালটের কাগজে আলাদা ব্যালট বাক্স, স্বচ্ছতা রক্ষায় থাকবে সিসিটিভি নজরদারি, এমনকি এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচারও হতে পারে।
প্রার্থীরা থেমে নেই এক মুহূর্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন থেকে ষোলশহর স্টেশন, মেস-কটেজ থেকে আবাসিক হল সবখানেই বাজছে প্রচারের ঢাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমান তালে প্রচারণা। ভোটারদের মুখে মুখে ঘুরছে দাবির তালিকা যাতায়াত, সেশনজট, নিরাপত্তা, সিট বণ্টন, খাবারের মান, হল-রাজনীতি থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।
প্রার্থীরাও শুনছেন, বলছেন, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। যেমন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী চৌধুরী তাসনীম জাহান শ্রাবণ বলেন, “শাটল ট্রেনের প্রতিটি বগিতে, স্টেশনের প্রতিটি কোণে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। সাড়া পাচ্ছি ভরপুর।”
অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন, যিনি এই নির্বাচনের প্রধান দায়িত্বে, তার কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয়—“৩৫ বছর পর এই নির্বাচন যেন বিতর্কমুক্ত থাকে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ব্যালট ছাপানো থেকে সিসিটিভি নজরদারি—সবই কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে হচ্ছে।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে তাই এবার শুধু নির্বাচন নয়, এটি প্রজন্মের প্রত্যাবর্তন। এক প্রজন্মের কাছে যা ছিল স্মৃতি, অন্য প্রজন্মের কাছে তা এখন বাস্তবতা। ১৫ অক্টোবরের ভোট যেন শুধু প্রতিনিধি বাছাই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের বহু বছরের অপেক্ষার প্রতিধ্বনি—যেখানে প্রতিটি ভোটকক্ষের ভেতর থেকে বের হবে গণতন্ত্রের নতুন শ্বাস।