Home রাজনীতি রাজনৈতিক সভায় চাটুকারিতার প্রতিযোগিতা

রাজনৈতিক সভায় চাটুকারিতার প্রতিযোগিতা

মন্তব্য প্রতিবেদন:

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে এখন যেন এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা চলছে। কে বেশি সময় ধরে নেতার বন্দনা করতে পারে, সেটাই যেন মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। বক্তারা মঞ্চে ওঠেন জনগণের কথা বলার জন্য, কিন্তু পাঁচ মিনিটের বক্তৃতায় চার মিনিটই কেটে যায় নেতা-নেত্রীদের গুণগানে। এতে শ্রোতারা যেমন বিরক্ত হন, তেমনি রাজনীতির মূল বার্তাটিও হারিয়ে যায় আবেগঘন প্রশংসার ভেতরে।

অনেক সভায় দেখা যায়, একেকজন বক্তা যেন অপরজনকে ছাড়িয়ে যেতে চান বন্দনায়। কেউ বলেন, “অমুক নেতা না থাকলে দেশ অন্ধকারে ডুবে যেত,” আবার কেউ বলেন, “তাঁর নেতৃত্বে সূর্যের আলো নেমেছে।” এসব অতিরঞ্জিত বর্ণনা শুধু সময় নষ্টই করে না, রাজনীতির মানকেও নিচে নামিয়ে দেয়।

রাজনীতি মূলত মানুষের সমস্যার সমাধানের জন্য, কিন্তু এখন বক্তৃতার মঞ্চ অনেক সময় রূপ নেয় আনুগত্য প্রদর্শনের আসরে। জনজীবনের সমস্যা, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, কৃষকের দুরবস্থা—এসব বিষয়ে খুব অল্পই আলোচনা হয়। অথচ এই বিষয়গুলো নিয়েই মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।

শ্রোতাদের অনেকে এমন বক্তৃতায় বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাদের মতে, এসব প্রশংসার পুনরাবৃত্তি শুনে নতুন কিছু জানা যায় না, বরং সময়ের অপচয় হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলেন, বক্তারা যদি তাদের সময়ের একটি বড় অংশ জনগণের কথা বলায় ব্যয় করতেন, তবেই রাজনীতির প্রতি আস্থা বাড়ত।

নেতার প্রশংসা নিশ্চয়ই রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়, কিন্তু যখন তা যুক্তিসঙ্গত সীমা ছাড়িয়ে চাটুকারিতায় পরিণত হয়, তখন রাজনীতির শুদ্ধতা নষ্ট হয়। রাজনৈতিক দলের উচিত এ বিষয়ে আত্মসমালোচনা করা যাতে বক্তারা জনগণের সমস্যা, নীতিমালা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন, নেতা বন্দনা নয়।

যে রাজনীতি জনগণকে কেন্দ্র করে তৈরি, সেখানে জনগণের কণ্ঠই হওয়া উচিত মুখ্য। বক্তৃতায় যদি জনগণের কণ্ঠ হারিয়ে যায়, আর শুধু বন্দনার প্রতিধ্বনি শোনা যায়, তবে রাজনীতির লক্ষ্যও হারিয়ে ফেলে তার মানে ও মর্যাদা।