Home First Lead নিলামে চায়ের দাম বেড়েছে, সংকট কাটেনি

নিলামে চায়ের দাম বেড়েছে, সংকট কাটেনি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: বাংলাদেশের চা শিল্প দীর্ঘদিন ধরেই নিলাম নির্ভরতা ও উৎপাদন খরচের তুলনায় কম বিক্রির কারণে লোকসানে ভুগছে। ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো নিলামে বিক্রির ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়নি। চলতি ২০২৫-২৬ মৌসুমে বাংলাদেশ চা বোর্ড দ্বিতীয় দফায় ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। এর ফলে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম আগের মৌসুমের তুলনায় প্রায় ২৬ টাকা বেড়েছে।

চা বোর্ডের তথ্যে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ৪ কোটি ১৭ লাখ ৪৬ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে, যার মোট মূল্য (শুল্ক ও মাশুল ব্যতীত) ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ফলে প্রতি কেজির গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩৬ টাকা। তুলনামূলকভাবে ২০২৪-২৫ মৌসুমে একই সময়ে প্রতি কেজির গড় দাম ছিল ২১০ টাকার বেশি। এই হিসেবে চলতি মৌসুমে প্রতি কেজির দাম ২৬ টাকা বেড়েছে।

চট্টগ্রামে গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিলামে প্রতি কেজির গড় মূল্য ২৫৩ টাকা ২৬ পয়সা ছিল। এর আগে ২৪তম নিলামে গড় মূল্য ২৫৪ টাকা ৩৩ পয়সা। চলতি নিলামে চায়ের বিক্রির হার ৭০-৭৭ শতাংশ হওয়ায় বাগান মালিকরা আশা করছেন, মৌসুমের শেষ পর্যন্ত চায়ের দাম ভালো থাকবে।

তবে দাম বাড়লেও চা শিল্পের সমস্যার মূলে রয়েছে ঋণ ও নগদ প্রবাহের সংকট। বাংলাদেশী চা সংসদের সভাপতি কামরান তানভিরুর ইসলাম বলেন, “নিলামে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় বড় শিল্পের মতো ঋণ নিয়ে কার্যকর ব্যবসা করা যায় না। বর্তমানে ৩১টি বাগান চরম সংকটে রয়েছে। নগদ অর্থপ্রবাহ না থাকায় চা উদ্যোক্তারা ঋণ পেতে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্রমান্বয়ে আরও বাগান বন্ধ হয়ে যাবে।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিআরআর-জনিত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ব্যর্থ হয়, তবে দেশের চা শিল্প নতুন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে।

বাগানগুলোর চা উৎপাদন ও নিলামে মানভেদ অনুযায়ী দামও বেড়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রামের ৪ ও ৪ প্লাস লিকার রেটিংয়ের চায়ের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩১৫ টাকা, বটলিফের দাম ২৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্য গ্রেডের চায়ের দামও ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে এই মূল্যবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে, ফলে সাধারণ ক্রেতার কাছে চায়ের কেজিপ্রতি দাম ন্যূনতম ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চায়ের মূল্য বৃদ্ধি স্বাগতযোগ্য হলেও চা শিল্পের টেকসইতা এখনো নিশ্চিত নয়। নিলামে দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের ঋণ সমস্যা সমাধান ও নগদ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, না হলে বাংলাদেশের চা শিল্পের ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে পড়বে।