বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক চালবাজারে এক মিশ্র প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড এবং পাকিস্তান যেখানে রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে, সেখানে ভিয়েতনামের চাল রপ্তানিতে কিছুটা শ্লথ গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। একই সাথে, চালের রপ্তানি মূল্যেও দেখা দিয়েছে কিছুটা ওঠানামা।
রপ্তানির অগ্রযাত্রা ও ব্যতিক্রম:
বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ অর্থবছরে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় করেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তথ্য সংস্থা টেনডাটা-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের চাল রপ্তানির আয় ছিল ১১.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে আরও বেড়েছে। ভারতের এই আধিপত্যশীল অবস্থান বৈশ্বিক চালবাজারের মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
এদিকে, থাইল্যান্ডের চাল রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ, এবং পাকিস্তান অর্জন করেছে ৪৬ শতাংশের এক বিশাল প্রবৃদ্ধি। এই দেশগুলো বৈশ্বিক বাজারে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। তবে, ভিয়েতনামের চাল রপ্তানিতে ৭.৮ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে, যা তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মূল্য পরিস্থিতি: কমেছে গড় দাম, বেড়েছে সরবরাহ:
২০২৩ সালে চালের গড় রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। কিন্তু ২০২৫ সালের শুরুতে বৈশ্বিক সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমে এসেছে। বিশেষ করে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে চালের সরবরাহ বেড়েছে, যার ফলে দাম নেমে এসেছে টনপ্রতি গড়ে ৩৯০-৪০০ ডলারে। বর্তমানে ভিয়েতনামের ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনপ্রতি প্রায় ৩৯৯ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় কম।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের বিপুল উৎপাদন এবং রপ্তানি সক্ষমতা চালের বৈশ্বিক বাজারে একচ্ছত্র প্রভাব ফেলছে। দেশটি এখন বিশ্ববাজারে দামের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া বাজার ধরে রাখতে তাদের রপ্তানি মূল্য কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত এবং বাংলাদেশের জন্য গুরুত্ব:
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও জলবায়ু পরিবর্তন, এলনিনো প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম অস্থির ছিল, তবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে চালের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হয়েছে। ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর সরবরাহ সংকট অনেকটাই কেটে গেছে।
বাংলাদেশের জন্য এই স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশের চাল আমদানি নির্ভরতা এখনো বেশ বড়। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকলে অভ্যন্তরীণ বাজারেও মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
২০২৫ সালের বৈশ্বিক চালবাজারে ভারত, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তান রপ্তানিতে তাদের অগ্রগতি ধরে রেখেছে। তবে ভিয়েতনাম কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। বিশ্ববাজারে টনপ্রতি চালের গড় মূল্য সামান্য কমলেও, সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছর চালের বাজারে বড় ধরনের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা আপাতত নেই, যা ভোক্তা এবং আমদানিকারক উভয় পক্ষের জন্য স্বস্তিদায়ক।