Home আগরতলা ত্রিপুরায় কমছে চায়ের উৎপাদন, বাজারে সংকটের ইঙ্গিত

ত্রিপুরায় কমছে চায়ের উৎপাদন, বাজারে সংকটের ইঙ্গিত

রাকেশ দেবনাথ, আগরতলা: ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকাগুলোর চা বাগানে এবার উৎপাদন কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। জুন মাসের শেষভাগে গিয়ে আগরতলা চা বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আগরতলার নেহরু মার্কেটের চায়ের পাইকারি ব্যবসায়ী প্রশান্ত দেবনাথ বলেন, “গতবছরের তুলনায় এবার চা পাতার সরবরাহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম। বিশেষ করে বড়জলা, ধলাই আর উত্তর ত্রিপুরা জেলার বাগানগুলো থেকে চালান কম এসেছে।”

ত্রিপুরা টি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (টিটিডিসি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৬.৫ লক্ষ কেজি, যেখানে গত বছর একই সময়ে তা ছিল প্রায় ৮ লক্ষ কেজির মতো। সংস্থাটি জানিয়েছে, অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ ও অসময়ের বৃষ্টিপাতে নতুন চা কুঁড়ি পর্যাপ্ত হয়নি।

চা বাগান মালিকরা বলছেন, শুধু আবহাওয়া নয়, শ্রমিক সংকটও বড় কারণ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অনেক বাগানে মৌসুমি শ্রমিকরা এবার কাজ করতে আসেননি। এর ফলে পাতার সময়মতো ছাঁটাই হয়নি, যা উৎপাদন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

অন্যদিকে, রাজ্যের ভোক্তারা বলছেন, আগরতলার বিভিন্ন দোকানে মাঝারি মানের চায়ের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ রুপি পর্যন্ত বেড়েছে। বেশ কিছু দোকানদার অগ্রীম বুকিং না থাকলে নতুন চালান দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

টিটিডিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজ্যে মোট ৫৮টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ বাগান এখন সরকারি সহায়তা ও প্রযুক্তি হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে। টিটিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন সাহা বলেন, “আমরা কিছু নতুন উদ্যোগ নিচ্ছি যেমন মাটি বিশ্লেষণ, জলাধার উন্নয়ন এবং চা গাছের জাত পরিবর্তনের পরিকল্পনা।”

ত্রিপুরা চা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি জরুরি সমন্বয় সভা ডাকা হচ্ছে যাতে রাজ্যের চা শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা নেওয়া যায়।

এদিকে আগরতলার বাজারে যারা বাংলাদেশে চা রপ্তানি করেন, তারাও বলছেন, চলমান ঘাটতির কারণে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছোটখাট রপ্তানি কার্যক্রমও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

ত্রিপুরার অন্যতম কৃষি অর্থনীতি নির্ভর এই শিল্প নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যেমন হতাশ, তেমনি আশাবাদীও—যদি সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।