Home কৃষি শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ, পুড়ছে কুঁড়ি: চা শিল্পে অশনি সংকেত

শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ, পুড়ছে কুঁড়ি: চা শিল্পে অশনি সংকেত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম : চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ ও দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টিতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশের চা শিল্প। সিলেট, চট্টগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলের সমতল চা বাগানগুলোতে চা গাছ পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে, নতুন কুঁড়ি আসছে না, মাটিতে দেখা দিচ্ছে ফাটল। সেচের পানির তীব্র সংকটে নিয়মিত পরিচর্যায়ও ব্যর্থ হচ্ছেন চাষিরা। পরিস্থিতিকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন চা উৎপাদনে নিয়োজিত লাখো শ্রমিক ও ক্ষুদ্র চাষি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন তো দূরের কথা, মৌসুম শেষে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তীব্র খরা ও পোকামাকড়ের আক্রমণে দেশের চা বাগানগুলো কার্যত ধুঁকছে।

চা বাগানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ গাছে নতুন কুঁড়ি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনো চা গাছে পাতা পুড়ে লাল হয়ে গেছে, অনেক গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। সার ও সেচের খরচ বহন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উৎপাদকরা।

সিলেট অঞ্চলের একটি চা বাগানে কাজ করা শ্রমিক মোহনা বেগম জানান, ‘রোদে গাছ পুড়ে যাচ্ছে, পানি দিতেও পারি না। দিনদিন গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, বাগানে এখন আর আগের মতো কুঁড়ি দেখা যাচ্ছে না।’

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) পাত্রখোলা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন বলেন, ‘চা উৎপাদনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টি ও সহনীয় তাপমাত্রা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এখন তাপমাত্রা চায়ের সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ছড়া-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।’

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও রাঙামাটির চা বাগানগুলোতেও চিত্র একই। টানা খরায় পাতার গঠন পাল্টে যাচ্ছে, পাতার রঙ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হচ্ছে।

এনটিসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘চা গাছে কুঁড়ি কমে গেছে। অনেক জায়গায় পুরো পাতাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে উৎপাদনে।’

বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, চায়ের জন্য ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপযোগী। কিন্তু বর্তমানে তা ৩৫ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাগানে ছায়াদানকারী গাছ না থাকলে এমন তাপমাত্রা চা গাছের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়েও চায়ের জন্য শঙ্কাজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেখানকার ক্ষুদ্র চাষিরা জানাচ্ছেন, টানা আট মাস ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাটিতে আর্দ্রতা নেই। একরের পর একর চা গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নিয়মিত সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

চা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে কেবল সেচ নয়, মাটিতে জৈব সার ও টিএসপি প্রয়োগ করে গাছের পুষ্টি ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে সেগুলোর জন্যও প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা, যা অধিকাংশ বাগান মালিকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়। এর একটি বড় অংশই আসে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে। ন্যাশনাল টি কোম্পানি চলতি বছর ৭০ লাখ কেজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও চলমান পরিস্থিতিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

চা উৎপাদনের এই চরম সংকটে একদিকে যেমন দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহে চাপ সৃষ্টি হতে পারে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সরকারি সহায়তা ও জরুরি বৃষ্টির আশায় এখন তাকিয়ে আছেন বাগান মালিকরা ।