বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: চা শিল্পে দাবদাহের প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের বাগানগুলোতে তীব্র গরম ও প্রচণ্ড রোদ চা কুঁড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে, যার ফলে চা পাতা উত্তোলন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, “গত কিছুদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এই অবস্থায় চা শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না, অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”
মৌলভীবাজারের কালীঘাট চা বাগানের শ্রমিক অনিতা গোয়ালা বলেন, “আগে প্রতিদিন ৪৫–৫০ কেজি পাতা তুলতে পারতাম, এখন গরমের কারণে ৩০ কেজির বেশি তোলা সম্ভব হচ্ছে না।” বাগান কর্তৃপক্ষও স্বীকার করছেন যে তীব্র গরম কুঁড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে, যা সামগ্রিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. হানিফ জানান, “পাতা সংগ্রহ ও উৎপাদনের হার কমে যাওয়ায় আমাদের পরিকল্পনা বিপর্যস্ত হচ্ছে। যদি এই তাপমাত্রা স্থায়ী হয়, তবে চা শিল্পের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে চা গাছের বায়োফিজিওলজিক্যাল প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হচ্ছে। কুঁড়ি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, ফলে পাতা সংগ্রহ বিলম্বিত হচ্ছে। এর প্রভাব বাজার সরবরাহ ও দামের ওঠানামাতেও পড়তে পারে।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন দাবি করেছে, তীব্র রোদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন। তারা পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ছায়াযুক্ত এলাকা ও প্রচুর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
চা শিল্প বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, গরমের সময় শ্রমিকদের কাজের সময় সীমিত রাখা, ছায়াযুক্ত এলাকা তৈরি করা এবং পর্যাপ্ত জল সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া চা গাছের তাপ নিরোধক সেচ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট যে, চা শিল্পের জন্য গরম কেবল সাময়িক সমস্যা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও ফেলতে পারে। সঠিক সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে উৎপাদন ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য দুটোই রক্ষা করা সম্ভব হবে।