Home চা শিল্প চা-শ্রমিকদের শোষণ দাসপ্রথার মতো, অভিযোগ শ্রমিক সংঘের

চা-শ্রমিকদের শোষণ দাসপ্রথার মতো, অভিযোগ শ্রমিক সংঘের

শ্রম উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে যখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে, তখন দৈনিক মাত্র ১৮৭ টাকা মজুরিতে চা-শ্রমিকরা কীভাবে পাঁচ-ছয় সদস্যের পরিবার চালাবেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শ্রমিক নেতারা। দেশের অন্যতম প্রাচীন শিল্প খাত চা-শিল্পের প্রধান কারিগর এই শ্রমিকদের জীবনমান আজও ন্যূনতম মানবিক পর্যায়ের নিচে রয়ে গেছে বলে অভিযোগ তাদের।

রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রম উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির নেতারা। এর আগে লাল পতাকা ও দাবিসম্বলিত ফেস্টুন হাতে নিয়ে চা-শ্রমিকরা শহরের চৌমুহনা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং সেখানে সমাবেশ করে বক্তব্য দেন।

চা-শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক হরি নারায়ণ হাজরা বলেন, “প্রায় ২০০ বছর ধরে চা-শ্রমিকরা বন-জঙ্গল ও হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে প্রতিদিন লড়াই করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। অথচ আজও তাদের মজুরি মানবিক ন্যূনতম মাত্রায় পৌঁছায়নি। বর্তমানে এ ক্লাস বাগানে দৈনিক মজুরি সর্বোচ্চ ১৮৭ টাকা, যা দিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার চালানো একেবারেই অসম্ভব।”

বর্তমানে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার পর এ ক্লাস বাগানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি দাঁড়িয়েছে ১৮৭.৪৩ টাকা, বি ক্লাসে ১৮৬.৩২ টাকা এবং সি ক্লাসে ১৮৫.২২ টাকা। অথচ শ্রমিক নেতাদের দাবি, দৈনিক ন্যূনতম ১ হাজার টাকা আয় ছাড়া একটি পরিবার বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কারণ শুধুমাত্র সাধারণ তিন বেলা খাবারের জন্যই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক অন্তত ২৫০ টাকা ব্যয় হয়।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, অতীতে তারা রেশন হিসেবে চাল, আটা, ডাল, চিনি, লবণ, সাবান, কেরোসিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেতেন। এখন রেশন সীমিত করে সাপ্তাহিক মাত্র ৩.২৭ কেজি চাল বা আটা দেওয়া হয়। ক্ষেতের জমি থাকলে প্রতি বিঘায় বার্ষিক ১১২ কেজি রেশন কর্তন করা হয়। অনেক সময় দেওয়া চাল বা আটা খাবার উপযোগী থাকে না।

চা-শ্রমিক নেতারা জানান, চা-শিল্প থেকে সরকার প্রতিবছর বিপুল রাজস্ব আয় করে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১ কোটির বেশি কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। সঠিক নীতিমালা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলে চা শিল্পকে অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে পরিণত করা সম্ভব। অথচ এই শিল্পের আসল কারিগর শ্রমিকরা মালিকদের মুনাফার পাহাড় গড়লেও নিজেরা বঞ্চিত হচ্ছেন মৌলিক অধিকার থেকে।

শ্রমিক সংঘ সিলেট ও মৌলভীবাজার শাখার নেতারা বলেন, ন্যায্য মজুরি না দিয়ে চা শ্রমিকদের ওপর মালিকপক্ষের শোষণ-লুণ্ঠন চলছে, যা প্রাচীন দাসপ্রথার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা অভিযোগ করেন, অভিজ্ঞ ও নবীন শ্রমিককে একই হারে মজুরি দেওয়ায় দীর্ঘদিন কাজ করা শ্রমিকদের কোনো বাড়তি স্বীকৃতি নেই।

শ্রমিকদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—দৈনিক মজুরি বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা, বার্ষিক ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, উৎসব বোনাস চালু, রেশন বৃদ্ধি, ভূমির অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা ঘোষণা করা।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করা হলেও শ্রমিক নেতারা দ্রুত দাবি পূরণের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন। তাদের মতে, চা-শিল্প রক্ষা করতে হলে শ্রমিকদের জীবনমান নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।