Home আন্তর্জাতিক ট্রাম্পের শুল্কে ভারতের চিংড়ি খাত বিপর্যয়ের মুখে

ট্রাম্পের শুল্কে ভারতের চিংড়ি খাত বিপর্যয়ের মুখে

সম্ভাব্য ক্ষতি ৬০ হাজার কোটি টাকা

কৃষ্ণা বসু, কলকাতা: ভারতের চিংড়ি রপ্তানি খাত বর্তমানে এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ৫০% শুল্ক আরোপের কারণে ভারতের চিংড়ি রপ্তানি শিল্প মারাত্মক ধাক্কা পেয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই শুল্কের কারণে দেশের চিংড়ি খাতের বার্ষিক বাজার প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

শুল্কের বিস্তারিত প্রভাব
আগামী ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এই শুল্কের মধ্যে ২৫% প্রতিশোধমূলক শুল্ক এবং ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফলে ভারতের চিংড়ি রপ্তানি খাতে মোট শুল্কের হার ৫৮.২৬% এ পৌঁছেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের চিংড়ি রপ্তানি প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা দেশের মোট চিংড়ি রপ্তানির প্রায় অর্ধেক। এই শুল্কের কারণে রপ্তানি ১৫-১৮% কমতে পারে এবং রপ্তানি রাজস্বেও ১৮-২০% হ্রাস হতে পারে।

কৃষকদের দুর্দশা
অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা ও ওড়িশার মতো প্রধান চিংড়ি উৎপাদন এলাকা থেকে জানা গেছে, কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। রপ্তানিকারকরা চাষিদের কাছ থেকে চিংড়ি কিনতে ২০% কম মূল্য দিচ্ছেন। এর ফলে চাষিদের লাভ মার্জিন সংকুচিত হচ্ছে এবং অনেকেই উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। কিছু চাষি বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকছেন, যেমন মাছ চাষ বা স্থানীয় ব্যবসা, যা খাতের উৎপাদনকেও প্রভাবিত করছে।

বাজারে প্রতিযোগিতার চাপ
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের প্রধান প্রতিযোগীরা ইকুয়েডর, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। এই দেশগুলিতে শুল্কের হার ভারতের তুলনায় অনেক কম—ইকুয়েডরের ক্ষেত্রে মাত্র ১৫%। ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় চিংড়ি রপ্তানিকারকরা বড় প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে ভারতের অবস্থান দুর্বল হতে পারে।

সরকারের পদক্ষেপ ও সমাধান
ভারত সরকার ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকদের সহায়তার জন্য একটি আর্থিক প্যাকেজ প্রস্তুত করছে। এতে ছোট ব্যবসা ও রপ্তানিকারকদের জন্য ঋণ সহায়তা, লোন পুনর্গঠন, এবং অন্যান্য আর্থিক উদ্দাম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সরকারের লক্ষ্য খাতকে স্থিতিশীল রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে ভারতের চিংড়ি রপ্তানি খাতের জন্য ভবিষ্যৎ বেশ অনিশ্চিত। কৃষকরা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছেন, রপ্তানিকারকরা বিকল্প বাজার খুঁজছেন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আরও শক্ত হচ্ছে। তবে সরকারি সহায়তা এবং বিকল্প বাজারে মনোযোগ দিলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হ্রাস করা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি পরিবর্তন না হলে ভারতের চিংড়ি রপ্তানি খাতের পুনরুদ্ধার কঠিন হবে। কৃষক ও রপ্তানিকারকরা বর্তমানে চরম চাপে আছেন, এবং দেশের চিংড়ি রপ্তানি শিল্পের ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাজারের নীতি ও সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে।