Home Third Lead চিটাগাং চেম্বার নির্বাচন স্থগিত: আস্থার সংকটে ব্যবসায়ী সমাজ

চিটাগাং চেম্বার নির্বাচন স্থগিত: আস্থার সংকটে ব্যবসায়ী সমাজ

বিতর্কিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ

নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম: চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) নির্বাচন স্থগিত হওয়ার খবর বৃহস্পতিবার বিকেলেই ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার, ১ নভেম্বর যেদিন ভোট হওয়ার কথা ছিল। তার আগে এই ঘোষণায় পুরো ব্যবসায়ী মহল যেন হতভম্ব হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন পর ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের যে উৎসবমুখর পরিবেশ গড়ে উঠেছিল, তা এক নিমিষে নিস্তেজ হয়ে গেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেমে যাওয়ার পেছনে ভেতরের একটি প্রভাবশালী ও বিতর্কিত গোষ্ঠীর কৌশলকে দায়ী করছেন অনেকেই।

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ব্যবসায়ীদের গোষ্ঠীগত বিভাজন তীব্র আকার নেয়। প্রার্থিতা বাতিল, ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি, নিয়ম-কানুনের ব্যাখ্যা নিয়ে তর্ক,  একের পর এক জটিলতা তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করে। আগে থেকেই স্পষ্ট হচ্ছিল, একটি গোষ্ঠী পরাজয়ের আশঙ্কায় ইচ্ছাকৃতভাবে ভোট প্রক্রিয়াকে অচল করতে চায়। চেম্বারের একাধিক সিনিয়র সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ যেন পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের আগেই অচলাবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা। এখন যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তার মূলেই আছে এই কৌশল।”

স্থগিতাদেশ ঘোষণার পর থেকেই বন্দরনির্ভর শিল্প, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা এবং এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন  কেন নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে হতাশা ঝরছে শত শত ব্যবসায়ীর পোস্টে, যেখানে অভিযোগ উঠছে “স্বার্থান্বেষী একটি মহল” চেম্বারের ভাবমূর্তি ধ্বংস করছে।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মহল মনে করছে, এটি শুধু একটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার ঘটনা নয়, এটি নেতৃত্ব সংকটের গভীর প্রতিফলন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর চেম্বার নেতৃত্বে দক্ষ ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর যে আশা জেগেছিল, কিন্তু এখন তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একজন তরুণ উদ্যোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা এমন নেতৃত্ব চেয়েছিলাম, যারা সত্যিকার অর্থে ব্যবসায়ীদের কথা বলবে। এখন মনে হচ্ছে, পুরনো গোষ্ঠীগুলোর কৌশল আবারও সবকিছু পেছনে টেনে নিচ্ছে।”

চিটাগাং চেম্বারের নির্বাচন বরাবরই বাণিজ্যিক অঙ্গনের ক্ষমতার প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখা হয়। তাই এবারের স্থগিতাদেশ শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়,  এর প্রভাব পড়বে শিল্পনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিনিয়োগ প্রবাহ, এমনকি ব্যবসায়ী ঐক্যের ভিত্তিতেও। বিশেষ করে যখন দেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন সবচেয়ে প্রভাবশালী আঞ্চলিক চেম্বারে এমন স্থবিরতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করতে পারে।

এখন পুরো ব্যবসায়ী সমাজ তাকিয়ে আছে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের দিকে।  তারা কবে নতুন তারিখ ঘোষণা করবে এবং কীভাবে নিশ্চিত করবে স্বচ্ছ, অবাধ ভোটের পরিবেশ। তবে আপাতত চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক অঙ্গনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে— নির্বাচন কি আবারও গোষ্ঠীস্বার্থের বলি হবে, নাকি এবার সত্যিকার অর্থে ব্যবসায়ীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি হবে?

সবশেষে বলা যায়, চেম্বার নির্বাচন স্থগিত হওয়ার ঘটনা কেবল ভোট বিলম্ব নয়,  এটি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজে আস্থা ও নেতৃত্বের সংকটের এক প্রতীক। এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ নির্ভর করছে চেম্বার কত দ্রুত নিজেকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং সকলের আস্থার সংগঠন হিসেবে পুনর্গঠন করতে পারে তার ওপর।