Home আন্তর্জাতিক বিশ্ববাজারে চিনির বাম্পার উৎপাদন: ৫ বছরের সর্বনিম্ন দর

বিশ্ববাজারে চিনির বাম্পার উৎপাদন: ৫ বছরের সর্বনিম্ন দর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০২৫-২৬ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে চিনির উৎপাদনে বড় ধরনের উল্লম্ফনে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দামে ধস নেমেছে। উৎপাদনের তুলনায় চাহিদার গতি মন্থর হওয়ায় বিশ্ববাজারে চিনির দাম গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (USDA) এবং বিভিন্ন বাজার বিশ্লেষক সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।

উৎপাদন বনাম চাহিদা: একটি অসম সমীকরণ
USDA-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী চিনির উৎপাদন রেকর্ড ১৮৯.৩১৮ মিলিয়ন মেট্রিক টনে (MMT) পৌঁছাতে পারে। এর বিপরীতে বিশ্বব্যাপী চিনির চাহিদা ১.৪% বাড়লেও তা দাঁড়াবে প্রায় ১৭৭.৯২১ মিলিয়ন মেট্রিক টনে। অর্থাৎ, উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা প্রায় ১১.৪ মিলিয়ন টন কম।

ফলে মৌসুম শেষে অবিক্রিত চিনির মজুদ বা ‘এন্ডিং স্টক’ (Ending Stocks) উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে ৪১.১৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টনে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত সরবরাহের এই চাপ সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বিশ্ববাজারের দরে।

দরের গ্রাফ নিম্নমুখী
সরবরাহ বাড়ার খবরে আন্তর্জাতিক ফিউচার মার্কেটে চিনির দামে বড় পতন হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরে কাঁচা চিনির (Raw Sugar) ফিউচার প্রাইস প্রতি পাউন্ডে ১৪.২১ সেন্টে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে চিনির অতিরিক্ত সরবরাহের (Oversupply) কারণে রিফাইন্ড এবং কাঁচা—উভয় ধরনের চিনির দামেই এই নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় থাকতে পারে।

নেতৃত্বে ব্রাজিল ও ভারত
চিনির বৈশ্বিক জোগানে প্রধান ভূমিকা রাখছে ব্রাজিল, ভারত ও থাইল্যান্ড। নাসডাক (Nasdaq) ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ মৌসুমে এককভাবে ব্রাজিল একাই প্রায় ৪৪.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের পথে রয়েছে। অন্যদিকে, ভারত ৩৫.৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং থাইল্যান্ড ১০.৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে।

তবে উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানিকারক দেশগুলো পড়েছে বিপাকে। দাম কমে যাওয়ায় বর্তমান দরে চিনি রপ্তানি করা তাদের জন্য লাভজনক হচ্ছে না। ফলে অনেক দেশ রপ্তানির পরিমাণ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ শঙ্কা ও বাজার পরিস্থিতি
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (OECD)-এর মতে, আগামী দশকে চিনির চাহিদা বাড়লেও তা হবে ধীরগতির। একদিকে বাম্পার ফলন, অন্যদিকে ধীরগতির চাহিদা—এই দুইয়ের যাঁতাকলে পড়ে বাজারে সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভোক্তা দেশগুলোর জন্য এই কম দাম স্বস্তিদায়ক হলেও রপ্তানিকারক দেশগুলোর অর্থনীতির জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ। উৎপাদন ও জোগানের এই অসমতা আগামী দিনগুলোতে চিনি শিল্পে বড় ধরনের সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

লাইক দিন 👍, শেয়ার করুন 🔁, এবং মন্তব্যে জানান আপনার মতামত!