নদীবিধৌত দুই উপজেলার স্বপ্ন নিরাপদ ও দ্রুত যাতায়াত
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ব্রহ্মপুত্র নদে চিলমারী–রৌমারী সেতু নির্মাণ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চল শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নৌপথনির্ভর চলাচলকে দায়ী করছে স্থানীয়রা। নদীভাঙন, নাব্যহীনতা, বর্ষায় উত্তাল স্রোত এবং অনিরাপদ নৌযাত্রা এলাকায় স্থায়ী উন্নয়নের পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, রৌমারী থেকে জেলা শহর কুড়িগ্রামে যেতে হলে অনেক সময়ই নৌ–বাস মিলে পুরো দিনের যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হয়। নৌপথে কয়েক ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে স্থলপথে আবার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়। বর্ষা বা বন্যার সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে। নদী উত্তাল থাকায় মাঝেমধ্যে নৌযান বন্ধ থাকে, তখন শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তির শেষ থাকে না।
চিলমারী–রৌমারী সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের কাছে শুধু একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়, বরং জীবনমানের উন্নয়নের পূর্বশর্ত বলে মনে করছে সবাই। সেতুটি হলে রৌমারী ও রাজিবপুরের সাথে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা—এই চারটি বিভাগের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। ঢাকার দূরত্ব প্রায় একশ কিলোমিটার কমে আসতে পারে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। চিকিৎসা, জরুরি সেবা, উচ্চশিক্ষা, কৃষিপণ্য পরিবহন এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই অঞ্চলে ধান, ভুট্টা, মরিচ, বিভিন্ন শাকসবজি এবং নদীভিত্তিক মৎস্যসম্পদ প্রচুর থাকলেও সহজ যোগাযোগ না থাকায় সেসব দ্রুত বাজারজাত করা যায় না। ফলে অনেক সময় কৃষকের ন্যায্য মূল্য পাওয়া সম্ভব হয় না। সেতু নির্মিত হলে উৎপাদন দ্রুত বাজারে পৌঁছাবে এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেতু হলে রৌমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ছোট-বড় শিল্প-কারখানার সম্ভাবনাও বাড়বে। পরিবহন সহজ হলে নতুন উদ্যোক্তারা এই অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। এতে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
সেতুর দাবিকে জনআন্দোলনে রূপ দিতে শনিবার ২৩ নভেম্বর সকাল থেকে দিনব্যাপী রৌমারীর ফুলুয়ারচর নদীবন্দর এলাকায় গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে ব্রহ্মপুত্র সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ। নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এতে সারিবদ্ধভাবে যোগ দেন এবং দাবির প্রতি সমর্থন জানান। আয়োজকেরা জানান, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কয়েক হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে, যা এই অঞ্চলের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে স্পষ্ট করে।
রৌমারীর বাসিন্দা মো. আব্দুল হাকিম বলেন, “নদী আমাদের জীবন হলেও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। সেতু হলে আমাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে যাওয়া সহজ হবে, চিকিৎসা পেতে আর ভয় লাগবে না। উন্নয়ন আমাদের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এই সেতুটি নির্মাণ হলে সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে রৌমারী–রাজিবপুরের কৌশলগত গুরুত্বও বাড়বে। নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং পর্যটনের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
ব্রহ্মপুত্র সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্যরা জানান, তারা খুব শিগগিরই গণস্বাক্ষর তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে তুলে ধরবেন। তাদের আশা, সরকার এই দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেবে এবং নদীবিধৌত দুই উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
লাইক দিন 👍, শেয়ার করুন 🔁, এবং মন্তব্যে জানান আপনার মতামত!










