Home আন্তর্জাতিক নীল রঙের কুকুরের দেখা মিললো চেরনোবিলে

নীল রঙের কুকুরের দেখা মিললো চেরনোবিলে

 তেজস্ক্রিয়তা নাকি অন্য কিছু? 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংরক্ষিত এলাকা বা ‘এক্সক্লুশন জোন’-এ সম্প্রতি উজ্জ্বল নীল রঙের লোমযুক্ত তিনটি কুকুর দেখা গেছে। অদ্ভুত দর্শনের এই কুকুরগুলোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়। নেটিজেনদের অনেকের ধারণা ছিল, ১৯৮৬ সালের ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনার প্রভাবে বা তেজস্ক্রিয়তার (Radiation) কারণে মিউটেশন ঘটে কুকুরগুলোর এমন রং হয়েছে। তবে আসল ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

নীল রঙের আসল রহস্য
‘ডগস অফ চেরনোবিল’ প্রোগ্রামের কর্মকর্তা টিমোথি এ. মুসো এই নীল রঙের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তিনি জানান, তেজস্ক্রিয়তা নয়, বরং একটি উল্টে যাওয়া পোর্টেবল টয়লেট (Porta-potty) বা ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারই এর জন্য দায়ী।

ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “কুকুরগুলোর এই নীল বর্ণ মূলত তাদের অপরিচ্ছন্ন আচরণের ফল। ধারণা করা হচ্ছে, কুকুরগুলো ওই টয়লেটের রাসায়নিক বা নীল রঙের ডাইয়ের ওপর গড়াগড়ি খেয়েছিল। তবে রঙটি দেখতে ভীতিকর মনে হলেও কুকুরগুলো বেশ চনমনে ও সুস্থ আছে।” স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সপ্তাহখানেক আগেও কুকুরগুলোর রঙ স্বাভাবিক ছিল।

চেরনোবিলের কুকুর ও মানবিক উদ্যোগ
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ইতিহাসের ভয়াবহতম পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর চেরনোবিলের বাসিন্দারা তড়িঘড়ি করে এলাকা ছাড়ার সময় তাদের পোষা প্রাণীগুলোকে ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। বর্তমানের এই কুকুরগুলো মূলত সেই ফেলে যাওয়া পোষ্যদেরই বংশধর।

২০১৭ সাল থেকে ‘ক্লিন ফিউচারস ফান্ড’-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ডগস অফ চেরনোবিল’ প্রোগ্রামটি এই ১৮ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বসবাসরত প্রায় ৭০০ কুকুরের দেখাশোনা করছে। তারা প্রতি বছর এসব প্রাণীকে খাবার, টিকা এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে।

বিজ্ঞানীদের গবেষণা: কুকুরের ‘সুপারপাওয়ার’
নীল রঙের কারণটি সাধারণ রাসায়নিক হলেও, বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ দিন ধরেই চেরনোবিলের এই কুকুরগুলোর ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী নরম্যান জে. ক্লেইম্যানের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল ১১৬টি কুকুরের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে জিনগত বিশ্লেষণ করেছেন।

২০২৩ ও ২০২৪ সালের গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। দেখা গেছে, এই কুকুরগুলো জিনগতভাবে পরিবর্তিত হয়ে এমন এক নতুন অভিযোজন ক্ষমতা বা ‘সুপারপাওয়ার’ অর্জন করেছে, যার ফলে তারা উচ্চ মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা, ভারী ধাতু এবং দূষণের মধ্যেও টিকে থাকতে পারছে।

গবেষণায় গবেষকরা ৫২টি নির্দিষ্ট জিন শনাক্ত করেছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কুকুরগুলোকে এই বিষাক্ত পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করেছে। মানুষের জন্য এই এলাকায় বসবাস নিষিদ্ধ এবং তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা সহনীয় সীমার চেয়ে ছয় গুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও, এই কুকুরগুলো সেখানে নিজস্ব বাস্তুতন্ত্রে দিব্যি বেঁচে আছে।