ধারাবাহিক রোমান্টিক গল্প
চোখের ভাষায় যে কথা বলা যায় না
স্মৃতি হাসান
সন্ধ্যার নরম আলো তখন শহরটাকে ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে। রিহানা আর রিয়াজ দিনের ব্যস্ততা পেরিয়ে আবারও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের চোখে হালকা অস্বস্তি, কিন্তু তার ভেতরেই আছে এক ধরনের আকর্ষণ—যেটা তারা কেউই প্রকাশ করতে সাহস পায় না।
আজ দেখা করার জরুরি কোনো কারণ ছিল না। তবুও রিহানা হঠাৎ রিয়াজকে মেসেজ করেছিল, “তুমি কি একটু সময় দিতে পারবে?”
রিয়াজ প্রথমে ভেবেছিল হয়তো কোনো কাজের কথা। কিন্তু রিহানার মুখ দেখেই বুঝল বিষয়টা অন্যরকম।
ভীষণ শান্ত, আবার একই সঙ্গে অস্থির।
দুজন হাঁটতে হাঁটতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ভবনের সামনে এসে দাঁড়াল। এই জায়গাটার সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের। প্রথম পরিচয়, প্রথম কথোপকথন, এমনকি প্রথমবার চুপ করে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকার অস্বস্তি—সবই এখানেই।
রিহানা ধীরে বলল,
“তুমি জানো… আজ দিনটা আমার খুব খারাপ কেটেছে।”
রিয়াজ একটু উদ্বিগ্ন হয়ে তাকাল।
“কী হয়েছে?”
“কিছু না… মানুষ কখনও কখনও খুব হতাশ হয়ে যায়। তখন মনে হয় কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।”
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রিহানা যোগ করল,
“কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা।”
রিয়াজ এই কথায় একটু থমকে গেল।
“কেন আলাদা?”
রিহানা মৃদু হাসল,
“তোমাকে দেখলে মনে হয় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এমন ভাবনা হয় না কারও জন্য।”
রিয়াজ কিছু বলার আগে হালকা বাতাস এসে দুজনের মাঝের দূরত্বটা একটু কমিয়ে দিল।
রিহানা তাকিয়ে আছে ঠিক রিয়াজের চোখের দিকে—কিন্তু তার দৃষ্টি নরম, শান্ত, আক্রমণাত্মক নয়।
রিয়াজ মাথা নিচু করে বলল,
“তুমি চাইলে আমি আছি… সবসময়।”
এই এক কথাতেই রিহানার ভেতরের কেমন যেন জমাট বাঁধা চাপ ভেঙে গেল।
সে ধীরে পাশে থাকা রেলিংয়ে বসে বলল,
“আজ তোমাকে একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম।”
“কি কথা?”
“আমি ভয় পাই। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে। কারণ কেউ যদি ভুল বুঝে…”
কথা শেষ করতে পারল না রিহানা।
রিয়াজ ধীরে পাশে বসে বলল,
“তুমি যে যা ভাবো… আমি ভুল বুঝব না। তুমি যা বলতে চাও, শান্ত মনে বলো।”
রিহানা দীর্ঘ শ্বাস নিল।
“আমার মনে হয়… আমি তোমার সঙ্গে কথা বললে, তোমার সঙ্গে থাকলে, অন্য রকম একটা শান্তি পাই। আমি জানি না এটা কী ধরনের অনুভূতি। কিন্তু এটা আমাকে টানে। খুব টানে।”
রিয়াজ কথা বলতে চাইলেও থেমে গেল। কারণ রিহানার চোখে তখন একটা ভরসা, একটা প্রত্যাশা—যা ভাঙার মতো নয়।
“যদি কখনও মনে হয় আমি তোমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি—তাহলে জেনে রেখো, সেটা আমার ভয়। তোমাকে নয়।”
এই কথায় রিয়াজ প্রথমবার খুব নিঃশব্দ হাসল।
“তুমি যতটা ভাবছ, আমি তার চেয়েও বেশি তোমাকে বুঝি,” সে বলল।
দুজনের মাঝের নীরবতা হঠাৎই খুব অর্থবহ হয়ে উঠল।
যে দূরত্ব এতদিন ছিল, সেটা আর আগের মতো লাগছে না।
এখন মনে হচ্ছিল—সম্ভবত এই দূরত্বটুকুই বদলে যাবে খুব শিগগির।
ঠিক তখনই আকাশে আলো কমে এল, যেন সন্ধ্যাটা দুজনের কথোপকথনের জন্যই সময় থামিয়ে রেখেছে।
রিহানা ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“চলো… আজ অনেক কথা হলো। কিন্তু মনে রেখো, আমি শুরু করেছি। এবার তোমার পালা।”
রিয়াজ হালকা হাসল।
কিন্তু সেই হাসির ভেতরে ছিল একটা প্রতিশ্রুতি, যেটা তারা দুজনই টের পেল।
এই সন্ধ্যার পর তাদের সম্পর্ক আর আগের জায়গায় থাকবে না।
কিছু একটা বদলে গেছে।
এবং সেই বদলের পরবর্তী অধ্যায়ই অপেক্ষা করছে পর্ব ৫-এ।










