বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে ছদ্মবেশে বান্ধবীকে এনে রাত্রিযাপন করানোর অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র নাজমুল ইসলাম এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছেন হল প্রশাসন।
জানা গেছে, গত ৪ জুন হলের ১৫৩ নম্বর কক্ষে বান্ধবীকে রাত কাটানোর জন্য নিয়ে আসেন নাজমুল। বান্ধবীও একই বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী। ভোররাতে সাইকেলের পেছনে ওই ছাত্রীকে ছেলেদের পোশাক স্কুলশার্ট ও ক্যাপপরিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন আবাসিক ছাত্রের সন্দেহ হয়। তারা ধাওয়া করলেও সাইকেলের গতি বেশি থাকায় ধরা যায়নি। বিষয়টি হলে কর্মরত প্রহরী ও পরে প্রশাসনকে জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীটির মেসে ওঠার সময়সীমা শেষ হওয়ায় এবং রাত হয়ে যাওয়ায় নাজমুল তাকে হলে থাকার ‘অনুরোধে’ সাড়া দেন। নিজের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটতে কাটতে রাত হয়ে গেলে, তিনি বান্ধবীকে হলে নিয়ে আসেন বলে স্বীকার করেন।
নাজমুল বলেন, “ওর মেস থেকে তিন তারিখের মধ্যে চলে যেতে বলা হয়েছিল। ও খুব অনুরোধ করেছিল, যাতে এক রাত হলে থাকতে দেয়। আমি ভুল করেই তাকে হলে নিয়ে আসি। পরদিন সকালে চলে যাওয়ার সময় হয়তো কেউ দেখে ফেলে।”
এই ঘটনাকে ‘গুরুতর শৃঙ্খলা ভঙ্গ’ হিসেবে উল্লেখ করে হল প্রাধ্যক্ষ ড. মো. মোতাহার হোসেন বলেন, “তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলায় নাজমুলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিও এ বিষয়ে পৃথক তদন্ত করে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, “এটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও শৃঙ্খলাবিরোধী ঘটনা। তদন্তে প্রমাণ মিললে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।”
হল শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা প্রশ্নে ছাত্রদের একাংশ গেটম্যান ও হল প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, “এভাবে ছদ্মবেশে হলে প্রবেশ এবং পরদিন পালানোর ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে কলুষিত করে। এ ঘটনায় শুধু অভিযুক্ত ছাত্র নয়, নিরাপত্তা তদারকির দায়িত্বে থাকা সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।”
ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব ফয়জুন্নেসা হলে। সেখানে আশরাফুল ইসলাম পারভেজ নামের এক যুবক শাড়ি, ওড়না ও টিপ পরে ছদ্মবেশে হলে ঢুকেছিলেন। পরে ছাত্রীরা তাকে ধরে ফেলে এবং হলে রক্ষিত নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তদন্তে জানা যায়, তিনি ‘হিম উৎসবে’ অংশ নিতে ক্যাম্পাসে এসে রাতে থাকার জায়গা না পেয়ে এমন কাজ করেন। তার সঙ্গী ছাত্রীকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়া ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মির মোশাররফ হোসেন হলে এক নারীকে ধর্ষণ এবং তার স্বামীকে আটকে রাখার অভিযোগে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোর নিরাপত্তা ও নৈতিকতা রক্ষায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রশাসনিক ব্যর্থতারই ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষায় যেমন কঠোর মনিটরিং দরকার, তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নিজ দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে হবে—এমনটাই মত সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষকদের।