Home Second Lead ছাগলকাণ্ডের মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা: বরখাস্ত ১১ পুলিশ সদস্য

ছাগলকাণ্ডের মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা: বরখাস্ত ১১ পুলিশ সদস্য

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের এক এসআই ও ১০ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানায় পুলিশ প্রশাসন।

বরখাস্ত হওয়া সদস্যরা হলেন-এসআই আবুল কাশেম এবং কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, মো. কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, রবীন্দ্র দাস, মো. রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভির রহমান ও মো. আবু সাইদ মিয়া।

অভিযোগের বিবরণ

অফিস আদেশে বলা হয়, ২০১৫ সালের একটি মামলার প্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মতিউর রহমানকে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হয়। ফেরার পথে স্কর্ট দলের সদস্যরা যাত্রাবিরতি করেন এবং এসময় মতিউর রহমানকে আলাদা কক্ষে বসিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেন। অথচ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা বাইরে সাধারণ স্থানে খাওয়ার ব্যবস্থা নেন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি জানার পর তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসে, হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানো স্কর্ট ডিউটির শৃঙ্খলার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং দায়িত্ব পালনে শৈথিল্যের প্রমাণ। এছাড়া অভিযোগ ওঠে, সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে তারা উৎকোচও গ্রহণ করেছিলেন।

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঘটনাটি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। তাই পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩-এর প্রবিধান ৮৮০ অনুযায়ী এসআইসহ মোট ১১ জনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকালীন সময়ে তারা নিয়মিত রোলকল, পিটি ও প্যারেডে উপস্থিত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন।

প্রেক্ষাপট

সম্প্রতি একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আদালত থেকে ফেরার পথে কারাগারের ভ্যান হঠাৎই ৫০ মিনিট থামে নরসিংদীর নিরালা হাড্ডি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে। এ সময় হাতকড়া ছাড়াই মতিউর রহমানকে ভ্যান থেকে নামানো হয়।

ফুটেজে দেখা যায়, আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাদা টি-শার্ট ও জিন্স পরিহিত এক ব্যক্তি। মতিউরকে সেই ব্যক্তির সঙ্গে ভেতরের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর মতিউর তাকে কাঁধে হাত রেখে বের হন, পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। পরে ওই ব্যক্তি মতিউরকে আলিঙ্গন করে বিদায় জানান এবং মতিউর আবার ভ্যানে ওঠেন। এরপর ভ্যানটি স্কর্ট গাড়িসহ রওনা হয়।

কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী, আসামিকে বহনের পথে দীর্ঘ বিরতির সুযোগ নেই। প্রয়োজনে মাত্র ৫–১০ মিনিটের জন্য খাওয়া বা বাথরুমে যাওয়া যায়, তাও হাতকড়া পরিয়ে এবং অনুমোদন নিয়ে। কিন্তু প্রায় ৫০ মিনিট একান্ত সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়াকে অনৈতিক, আইনের পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মী জুলকার নাইন সাইয়েদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সিসিটিভি ফুটেজটি শেয়ার করলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।