Home First Lead গরুর চামড়া আগের দামে, ছাগলের চামড়া নিয়ে হতাশা

গরুর চামড়া আগের দামে, ছাগলের চামড়া নিয়ে হতাশা

আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: চলতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পর কাঁচা চামড়ার বাজারে তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। সরকার দাম বাড়ালেও বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দর মিলছে না। গরুর চামড়ার দাম ছিল প্রায় আগের অবস্থানেই, আর ছাগলের চামড়ার বেলায় আগ্রহের অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঈদের দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকাসহ বিভিন্ন চামড়া আড়তে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ গরুর কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার মধ্যে। কিছু চামড়ার দাম ৬০০ টাকায়ও সীমাবদ্ধ ছিল। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে, যা প্রকৃতপক্ষে চামড়ার মূল্য নয় বলেই মন্তব্য করেছেন অনেক বিক্রেতা।

ট্যানারি মালিকরা জানাচ্ছেন, এ বছর গরুর চামড়ার পরিমাণে তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের চামড়া বেশি, ফলে মূল্য নির্ধারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক আড়তদার সরাসরি বলছেন, সরকার নির্ধারিত দরে চামড়া কেনা সম্ভব নয়, কারণ চামড়ার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে লবণ, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ, যার হিসাব সরকার দেয়নি।

চামড়া সংক্রান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র পুরান ঢাকার পোস্তা আড়তে সকাল থেকেই ছিল চামড়ার ভিড়। তবে প্রতিবারের মতো এবারও দাম নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ ও দরদাম চলেছে। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, মানহীন চামড়া উচ্চদামে বিক্রি করতে চাইছে অনেকে, আর বিক্রেতারা বলছেন, মানসম্মত চামড়ারও ন্যায্য মূল্য মিলছে না।

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর আশপাশেও একই চিত্র দেখা গেছে। দুপুরের পর থেকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অটোরিকশা ও ইজিবাইকে করে আসা চামড়ার গাড়িগুলো ভিড় জমায় আড়তে। সেখানে প্রতি পিস গরুর চামড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় কেনা হয়েছে। ছাগলের চামড়া কিনেছেন মাত্র ৫০ টাকায়।

সাভার কাঁচা চামড়া আড়ত মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক সোহরাব বলেন, “চামড়ার সঙ্গে লবণ, আড়তভাড়া, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে সরকার নির্ধারিত দামে কেনা সম্ভব নয়। আমরা যদি সেই দামে কিনি, তাহলে শুধু লোকসান গুনতে হবে।”

এ বছর দেশে কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার, আর প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঈদে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা।

গত ২৬ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয়। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ৬০-৬৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা। খাসির চামড়ার দাম ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও বাস্তবে এসব দাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন হয়নি।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ জানিয়েছেন, “এ বছর চামড়ার সরবরাহ ভালো, তবে ছোট আকৃতির গরুর চামড়া বেশি। প্রতি পিস চামড়ায় গত বছরের তুলনায় গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বাড়লেও সরকার নির্ধারিত দর পেতে সাধারণ মানুষ ব্যর্থ হচ্ছে।”

হেমায়েতপুরের আড়তগুলোতে প্রায় চার লাখ চামড়া সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই বাজারের নীতিগত সংকট, দরদাম নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং ছাগলের চামড়া নিয়ে উপেক্ষা—সব মিলিয়ে চামড়ার মৌসুমে স্বস্তি আসেনি কারও ভাগ্যে।

🔎 আপনার এলাকায় কোরবানির চামড়া কত দামে বিক্রি হয়েছে? অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আমাদের ফেসবুক পাতায়!
📲 আরও খবর ও বিশ্লেষণের জন্য ভিজিট করুন: বিজনেসটুডে২৪.কম
✍️ আপনি কি চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত? আমাদের জানাতে পারেন আপনার মতামত। লিখুন: info@businesstoday24.com
📢 আপনার বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন, যাতে সবাই জানে চামড়া বাজারের প্রকৃত অবস্থা!