কার্যকর হচ্ছে না সরকারি নিষেধাজ্ঞা
আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: দেশে ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করার আইন থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি বলে চিত্র উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে। বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ ভোজ্যতেল এখনো ভিটামিনবিহীন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তেল দূষিত হয়ে পড়ছে রাসায়নিক সংস্পর্শে। ফলে দেশে বিশেষত শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ঘাটতি ও দৃষ্টিশক্তি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
আইসিডিডিআর,বি-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে বিক্রি হওয়া মোট ভোজ্যতেলের প্রায় ৬৫ শতাংশই খোলা ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর মাত্র ৭ শতাংশ তেলেই আইন অনুযায়ী পর্যাপ্ত ভিটামিন পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বাজারে যে তেল পৌঁছাচ্ছে, তার বড় একটি অংশই ভোক্তাদের জন্য পুষ্টিহীন এবং সম্ভাব্যভাবে ক্ষতিকর।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খোলা ড্রামে তেল বিক্রি শুধু আইন ভঙ্গ নয়, এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সংকটের ইঙ্গিত। কারণ এই ড্রামগুলোর অনেকগুলো পূর্বে রাসায়নিক দ্রব্য বা শিল্পজাত পদার্থ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা তেলকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে তোলে। দীর্ঘমেয়াদে এই তেল মানবদেহে বিষক্রিয়া, লিভার ও কিডনি ক্ষতিসহ নানা অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব ড্রামে কোনো লেবেল, উৎপাদনকারীর নাম বা উৎসের তথ্য থাকে না। ফলে তেলের মান যাচাই বা দায় নির্ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে বাজারে নকল, ভেজাল ও ভিটামিনবিহীন তেল সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে।
সরকার ২০২২ সালে দুটি আলাদা নির্দেশনার মাধ্যমে খোলা তেল বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জুলাই থেকে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর থেকে খোলা পাম তেল বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে মাঠপর্যায়ে এই নিষেধাজ্ঞা এখনো কার্যকর হয়নি। শহরের বাজার থেকে শুরু করে গ্রামীণ হাট-বাজার পর্যন্ত খোলা ড্রামে তেল বিক্রি এখনো অব্যাহত।
জনস্বাস্থ্য গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এ অবস্থায় শুধু আইন নয়, কার্যকর তদারকি ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই পরিবর্তন আনা সম্ভব। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত তদারকি জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে তেলের প্যাকেজিংয়ে মান নিয়ন্ত্রণ ও লেবেলিং নিশ্চিত করাও জরুরি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি মোকাবিলা শুধু স্বাস্থ্য বিষয় নয়, এটি উৎপাদনশীলতা ও জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। পুষ্টিহীন খাদ্যাভ্যাস কর্মক্ষমতা হ্রাস করে, যার প্রভাব পড়ে শ্রমবাজার ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সময় এসেছে বাজারে ভিটামিনসমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং সঠিকভাবে প্যাকেজকৃত তেল নিশ্চিত করার। এজন্য সরকার, শিল্পখাত, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা, সবার মধ্যে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা প্রয়োজন।










