Home সারাদেশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সর্বজনীন করতে আইন সংস্কার অপরিহার্য

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সর্বজনীন করতে আইন সংস্কার অপরিহার্য

জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবসের আয়োজনে বক্তারা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ভোটাধিকারের মতো মৌলিক নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, বাজেট বণ্টন ও সুশাসন নিশ্চিত করার অন্যতম হাতিয়ার হলো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও আইনি কাঠামোর সীমাবদ্ধতা এ লক্ষ্য অর্জনের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন: অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়” শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

ওয়েবিনারে উপস্থাপিত তথ্যে বলা হয়, বর্তমানে দেশে জন্ম নিবন্ধনের হার ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ। অথচ বৈশ্বিক গড় যথাক্রমে ৭৭ ও ৭৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা প্রায় সর্বজনীন নিবন্ধন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪’ দ্রুত সংশোধন করে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়া গেলে নিবন্ধন হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এতে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে জন্ম নেওয়া প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের আওতায় আসবে।

তারা আরও বলেন, মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করা গেলে উত্তরাধিকার নির্ধারণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও নারীর অধিকার সুরক্ষায় তা বড় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন সনদের ভুল সংশোধনের আবেদনের ফি মওকুফ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে নিবন্ধন তথ্যের ভিত্তিতে ‘ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস’ তৈরি বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়।

জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “আইন সংস্কারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের দায়িত্ব দিলে ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এটি এসডিজি’র ১৬.৯ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে, যেখানে সবার জন্য বৈধ পরিচয় নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।”

ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আইন সংস্কারের পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের কার্যকর বাস্তবায়নও জরুরি। এজন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, জনবল ঘাটতি দূরীকরণ, প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধান এবং সংশ্লিষ্ট সব খাতের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।”

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান। এছাড়া প্রিন্ট, টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন।

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন, যিনি ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।