Home স্বাস্থ্য নীরব ঘাতক জরায়ু ক্যান্সার, অবহেলায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

নীরব ঘাতক জরায়ু ক্যান্সার, অবহেলায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

হেলথ ডেস্ক: জরায়ু ক্যান্সার নারীদের মধ্যে অন্যতম প্রাণঘাতী ক্যান্সার হলেও এটি এমন একটি রোগ, যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবু সচেতনতার অভাব, সামাজিক সংকোচ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ঘাটতির কারণে বহু নারী দেরিতে এই রোগের কথা জানতে পারেন।

চিকিৎসকদের মতে, জরায়ু ক্যান্সার মূলত মানব প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি সংক্রমণের সঙ্গে জড়িত। এই ভাইরাস দীর্ঘদিন শরীরে থেকে জরায়ুর কোষে পরিবর্তন ঘটায় এবং ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। সাধারণত বাল্যবিবাহ, একাধিক সন্তান জন্মদান, দীর্ঘদিন গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার, ধূমপান এবং অনিরাপদ যৌনাচার এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

রোগের শুরুর দিকে অনেক সময় তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে পরবর্তী পর্যায়ে অনিয়মিত রক্তক্ষরণ, মাসিকের বাইরে রক্তপাত, সহবাসের পর রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা বা অস্বাভাবিক স্রাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণকে অনেক নারী সাধারণ সমস্যা ভেবে অবহেলা করেন, যা পরে বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ ও প্রাথমিক শনাক্তকরণে নিয়মিত স্ক্রিনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট এবং এইচপিভি পরীক্ষা নিয়মিত করলে ক্যান্সার হওয়ার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবর্তন ধরা পড়তে পারে। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভ্যাকসিনের মাধ্যমেও এইচপিভি সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব।

বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জরায়ু ক্যান্সারজনিত মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো গ্রামীণ ও প্রান্তিক নারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং সহজলভ্য স্ক্রিনিং সুবিধার সংকট। অনেক নারী সামাজিক লজ্জা বা ভয় থেকে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, পরিবার ও সমাজের সহযোগিতা ছাড়া এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব নয়। নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কিশোরীদের এইচপিভি ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো গেলে জরায়ু ক্যান্সার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

জরায়ু ক্যান্সার কেবল একটি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ইস্যু। সময়মতো পরীক্ষা ও সচেতন সিদ্ধান্তই পারে হাজারো নারীর জীবন বাঁচাতে।