Home রাজনীতি নতুন জোট গঠনের পথে জাতীয় পার্টি

নতুন জোট গঠনের পথে জাতীয় পার্টি

ছবি: সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তি তৈরির লক্ষ্যে ১৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। গতকাল রবিবার রাজধানীর গুলশানের ‘হাওলাদার টাওয়ারে’ অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দলগুলো ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ নামে একটি নতুন জোট গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য হয়েছে।

এই নতুন জোটের মুখপাত্র হিসেবে মনোনীত হয়েছেন জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। আগামী ৬ ডিসেম্বর জোটটির আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আত্মপ্রকাশের আগে জোটভুক্ত দলগুলোর সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে একটি ‘লিয়াজোঁ কমিটি’ গঠন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

জাপা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

দেশের ক্রান্তিকাল ও ঐক্যের আহ্বান

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বিগত ৫৪ বছরে নির্বাচিত, অনির্বাচিত ও সামরিক সরকার সবাই দেশকে কম-বেশি বিভক্ত করেছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য রাষ্ট্রনায়কোচিত ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি একটি ভীতিমুক্ত পরিবেশের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন।

নির্বাচনী পরিবেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কিন্তু এর জন্য আইনশৃঙ্খলা কে ঠিক করবে? খুলনায় দেখলাম কোর্টের সামনেই গুলি করে দুই জনকে হত্যা করেছে। দলের মনোনয়ন না পেয়ে খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। কী ভয়াবহ!” তিনি পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, “একেকটা পরিবর্তন আসে আর পুলিশের পোশাকের রং বদল হয়। কিন্তু, চরিত্র বদলায় না। কারণ, যারা এই পুলিশকে পরিচালনা করেন তারা সবাই একই চরিত্রের মানুষ।” তিনি নতুন জোট প্রক্রিয়ার সফলতা কামনা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে জাপা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দেশের বর্তমান সময়কে ‘ক্রান্তিকাল’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “আমরা সবাই মনে করছি, ফেব্রুয়ারিতে দেশ নির্বাচনের দিকে যাবে। কিন্তু, সবার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তার পরেও আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।”

তৃতীয় ধারার সুস্থ রাজনৈতিক শক্তি গঠনের লক্ষ্য

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দেশের জনগণকে ‘একটি তৃতীয় ধারার সুস্থ রাজনৈতিক শক্তি’ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, “দেশ আজ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে আমাদের ভালো ফল করার সম্ভাবনা আছে।”

তিনি জোটের মূলমন্ত্র ঘোষণা করে বলেন, “আমাদের জোটের মূলমন্ত্র হবে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র ও সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান।”

জাপা চেয়ারম্যান জোর দিয়ে বলেন, এই জোটটি শুধু নির্বাচনি জোট হবে না। “আমরা আগামীতে এই জোট নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতি নির্মূল করব। বিকশিত করব সুস্থধারার রাজনীতি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, যদি জোট সঠিকভাবে রাজনীতি পরিচালনা করতে পারে, তবে তারা ভবিষ্যতে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।

অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্ত

জোটের মুখপাত্র ও জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সূচনা বক্তব্যে বলেন, আগামী নির্বাচন ও দেশে সুস্থধারার রাজনীতিকে বিকশিত করার লক্ষ্যে যেসব দল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী, তাদের সঙ্গেই এই মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, “যদি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, তাহলে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।” তবে তিনি মন্তব্য করেন যে, “এখন পর্যন্ত দেশে নির্বাচন আয়োজনের মতো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।”

অংশগ্রহণকারী দলসমূহ

মতবিনিময় সভায় বক্তারা তাদের বক্তব্যে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এবং অর্থবহ নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম; জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা; জনতা পার্টি বাংলাদেশের (জেপিবি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, মহাসচিব সাংবাদিক শওকত, জেপিবির মহাসচিব শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম ও মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন ছালু, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক, বাংলাদেশ ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক, জাতীয় সংস্কার জোটের সভাপতি মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, বাংলাদেশ সার্বজনীন দলের সভাপতি নূর মোহাম্মদ মনির ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, পিচ অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান হাজী এস এম এ জলিল ও ন্যাপ ভাসানীর মহাসচিব জহিরুল ইসলাম।