Home আন্তর্জাতিক জাপানে চাল ইস্যুতে জনরোষ, কৃষিমন্ত্রীর পদত্যাগে উত্তাল রাজনীতি

জাপানে চাল ইস্যুতে জনরোষ, কৃষিমন্ত্রীর পদত্যাগে উত্তাল রাজনীতি

পদত্যাগের পর জাপানের কৃষিমন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

চাল কেনা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে জাপানের কৃষিমন্ত্রী তাকু ইতো পদত্যাগ করেছেন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার কাছে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তার মন্তব্য ঘিরে ভোটারদের ও আইনপ্রণেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যা ইশিবার নেতৃত্বাধীন সংকটাপন্ন সরকারকে আরও চাপে ফেলেছে।

সম্প্রতি এক অর্থসংগ্রহ অনুষ্ঠানে ইতো বলেছিলেন, তিনি কখনও চাল কিনতে হয়নি, কারণ সমর্থকেরা নিয়মিত চাল উপহার দিতেন। এমন এক সময়ে এমন মন্তব্য আসায় জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যখন জাপানে চালের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। খারাপ ফসল ও পর্যটনের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে চালের মূল্য গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

পদত্যাগের পর ইতো সাংবাদিকদের বলেন, “নাগরিকরা যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে কষ্ট পাচ্ছেন, আমি তখন একটি অত্যন্ত অনুপযুক্ত মন্তব্য করেছি। আমি দুঃখিত।”

প্রধানমন্ত্রী ইশিবা নতুন কৃষিমন্ত্রী হিসেবে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমিকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কোইজুমির সংস্কারমুখী মনোভাব কৃষি ও মৎস্য খাতে ফলপ্রসূ হবে।

ইশিবা বলেন, “কোইজুমি একজন অভিজ্ঞ, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ও সংস্কারে আগ্রহী রাজনীতিক। আমি তাকে দায়িত্ব দিয়ে আশাবাদী।”

চাল নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ এখন প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু। সরকার মার্চ থেকে জরুরি মজুদ থেকে চাল ছাড় করলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৫ কেজি চালের দাম ৪২৬৮ ইয়েনে পৌঁছেছে। সরকার চালের দাম ৩০০০ থেকে ৩৯৯৯ ইয়েনের মধ্যে রাখতে চায়। দীর্ঘদিনের উৎপাদন হ্রাসনীতিও এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে অনেকে মনে করেন।

নতুন কৃষিমন্ত্রী কোইজুমি বলেছেন, “এখন চালই আমার একমাত্র অগ্রাধিকার। আমি নিজেকে চাল বিষয়ক মন্ত্রী বলেই ভাবছি।”

তিনি আরও জানান, চালের দাম কমাতে কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থকে রক্ষা করা হবে না এবং দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে এলডিপির শক্তিশালী ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত চালচাষিদের স্বার্থে সরকার উচ্চ আমদানি শুল্ক বজায় রেখেছে। তবে এখন জনগণের স্বার্থেই পরিবর্তনের সময় এসেছে বলে মত দিয়েছেন কোইজুমি।

ইতোর পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রীর জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ে হতে যাওয়া উচ্চকক্ষের নির্বাচন সামনে রেখে ইশিবার সরকার ইতিমধ্যেই জনসমর্থন হারাচ্ছে। কিয়োডো নিউজের সর্বশেষ জনমত জরিপে ইশিবার জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে মাত্র ২৭ দশমিক ৪ শতাংশে। ভোটারদের প্রায় ৯০ শতাংশ চালমূল্য বৃদ্ধি মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিরোশি শিরাতোরি বলেন, “ইতোর পদত্যাগ অবশ্যম্ভাবী ছিল। কিন্তু বিরোধীদল অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়ার পরই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে সরকার নেতৃত্বের দুর্বলতা দেখিয়েছে।”