Home আইন-আদালত ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কায় জাপানের অর্থনীতি সংকুচিত

ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কায় জাপানের অর্থনীতি সংকুচিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

টোকিও: বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বাণিজ্যনীতির ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাপানের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বার্ষিক হারে ০.৭ শতাংশ কমে গেছে, যা পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক বেশি।

বিগত প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল সংশোধিত হিসাবে ২.৪ শতাংশ। প্রান্তিক ভিত্তিতে অর্থনীতি ০.২ শতাংশ হারে সংকুচিত হয়েছে, যেখানে পূর্বাভাস ছিল মাত্র ০.১ শতাংশ হ্রাসের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পতনের পেছনে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে জাপানের প্রধান রপ্তানি খাত—গাড়ি শিল্পে।

ভোগব্যয় স্থবির, রপ্তানি সংকুচিত

জাপানে ব্যক্তিগত ভোগব্যয়, যা অর্থনীতির অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে রয়েছে, তা এই প্রান্তিকে কার্যত স্থবির ছিল—কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। অথচ বাজার বিশ্লেষকরা ০.১ শতাংশ বৃদ্ধি আশা করেছিলেন।

অন্যদিকে, মূলধনী বিনিয়োগ বা পুঁজি ব্যয় বেড়েছে ১.৪ শতাংশ, যা পূর্বাভাসের (০.৮ শতাংশ) চেয়ে বেশি। তবে এই ইতিবাচক দিকটি রপ্তানি খাতে ধাক্কার কারণে পূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারেনি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নেট রপ্তানি (রপ্তানি থেকে আমদানি বাদ দিয়ে হিসাব) জিডিপি থেকে ০.৮ শতাংশ পয়েন্ট কেটে নিয়েছে। বাজারের ধারণা ছিল এই হার ০.৬ শতাংশের মতো হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশল এবং রাজনৈতিক চাপ:

জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিওজে) ২০২৪ সালে দীর্ঘমেয়াদি প্রণোদনা কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুদের হার ০.৫ শতাংশে উন্নীত করে। তবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি এখন স্পষ্টভাবে হোঁচট খাচ্ছে।

গত ৩০ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত আয়োজিত নীতিনির্ধারণী সভায় বিওজে তাদের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে। এতে বোঝা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছে না যে, স্থায়ী মজুরি বৃদ্ধি অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখবে।

অন্যদিকে, এই অর্থনৈতিক পতন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার ওপর রাজনৈতিক চাপও বাড়িয়ে তুলেছে। আইনপ্রণেতারা এখন নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ কিংবা কর হ্রাসের দাবি তুলছেন।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা:

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও, জাপান এখনও নিশ্চিত নয় তারা যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক থেকে মুক্তি পাবে কিনা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জাপান এই রেহাই চায়, বিশেষ করে তাদের গাড়ি খাত রক্ষা করার জন্য। কিন্তু এখনো স্পষ্ট নয়, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সেই ছাড় আদায় করা সম্ভব হবে কিনা