
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: চার দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। বুধবার (২০ আগস্ট) রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এবং পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার।
২১ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এ সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার এবং নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র উন্মোচন। পাকিস্তান হাইকমিশনের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, এ সময়ে বাংলাদেশি প্রতিপক্ষ, সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন।
সমঝোতা স্মারক ও আলোচনার খাত
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, সফরকালে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “উভয় দেশের আগ্রহের পণ্যগুলোর আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে এ সমঝোতা বড় ভূমিকা রাখবে।”
সাতটি খাতকে আলোচনায় বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হবে—খাদ্য ও কৃষিপণ্য, ওষুধ, ইস্পাত, পাট ও পাটজাত পণ্য, পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং সেবা খাত। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, মাছ-চিংড়ি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও ওষুধ পাকিস্তানে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান বাংলাদেশের বাজারে সুতা, চাল, গম, ফল, খেজুর ও বাদাম রপ্তানিতে আগ্রহী।
সফরের কর্মসূচি
- বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট): অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য, শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সঙ্গে মতবিনিময়।
- শুক্রবার: চট্টগ্রাম বন্দরে পরিদর্শন ও চট্টগ্রাম চেম্বারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক। একই দিনে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল কারখানা ঘুরে দেখা।
- শনিবার: টাঙ্গাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কারখানা পরিদর্শন।
- রোববার: সফরের শেষ দিনে বাণিজ্য উপদেষ্টা, সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা, ইপিবি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক। একই দিনে এফবিসিসিআই ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
বাণিজ্যের বর্তমান অবস্থা
ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। একই সময়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে ৬২ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পণ্য।
২০০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে মোট ১৮ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার, যা মূলত ব্যাংক, টেক্সটাইল, কনস্ট্রাকশন ও ওষুধ খাতে কেন্দ্রীভূত। বিনিয়োগের এই অঙ্ক বিশেষজ্ঞদের মতে এখনো তুলনামূলকভাবে সীমিত।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
১৯৭১ সালের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক ছিল প্রায় স্থবির। তবে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয় হয়। সেই ধারাবাহিকতায় জাম কামালের এই সফরকে উভয় দেশের জন্য একটি অর্থনৈতিক মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।