সম্পাদকীয়
জাহাজভাঙা শিল্প বহু বছর ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এই শিল্পের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পরিবেশগত অপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনের অপব্যবহার এখন আর ধামাচাপা দেওয়া যাচ্ছে না।
জার্মানির বহুল আলোচিত ‘ওয়েস্টারহ্যাম’ মামলার আপিল সিদ্ধান্ত, এবং বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডে ‘এমভি নর্থ সি প্রোডিউসার’-এর অবৈধ স্ক্র্যাপিং এই দুটি ঘটনাই আমাদের সামনে এক গভীর প্রশ্ন তুলে ধরছে: উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস ও শ্রমিক নিপীড়ন কতদিন চলবে?
‘ওয়েস্টারহ্যাম’ জাহাজটি যখন ভারতে পাঠানো হয়, তখন সচল ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল জাহাজটি পরিত্যক্ত করার। ইউরোপীয় আইন অনুযায়ী এটি “বর্জ্য” হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা, কিন্তু মালিকেরা “আন্তর্জাতিক জলসীমা” ব্যবহার করে দায় এড়িয়ে যান। ঠিক একই কৌশল ব্যবহৃত হয়েছিল ‘এমভি নর্থ সি প্রোডিউসার’–এর ক্ষেত্রেও। যেখানে যুক্তরাজ্য থেকে পাঠানো একটি “ঝুঁকিমুক্ত” জাহাজে পরে পাওয়া যায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও অ্যাসবেস্টস।
এই ঘটনাগুলি কেবল নির্দিষ্ট দুটি দেশের নয়, বরং বিশ্বব্যাপী এক সচেতনতা সংকটের প্রতিচ্ছবি। উন্নত রাষ্ট্রগুলো যেখানে কঠোর পরিবেশ আইন অনুসরণ করে, সেখানে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে বানানো হচ্ছে এক ‘বর্জ্য নিক্ষেপ কেন্দ্র’।
সময় এসেছে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী জাহাজভাঙা শিল্পকে স্বচ্ছ, নিরাপদ ও জবাবদিহিমূলক করার।
যতক্ষণ না এই খাতকে গ্লোবাল গভার্নেন্সের আওতায় আনা যাচ্ছে, ততক্ষণ পরিবেশ ও মানুষের জীবন উভয়ই বিপন্ন থাকবে।