Home First Lead আগামী দশকে স্ক্র্যাপ হবে ১৬ হাজার জাহাজ

আগামী দশকে স্ক্র্যাপ হবে ১৬ হাজার জাহাজ

বাড়ছে চাহিদা, প্রয়োজন টেকসই বিনিয়োগ

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: বিশ্বজুড়ে আগামী এক দশকে প্রায় ১৬ হাজার জাহাজ রিসাইক্লিংয়ের উপযোগী হয়ে উঠবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাল্টিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কাউন্সিল, (BIMCO)। তাদের হিসেবে, এই সংখ্যা আগের দশকের তুলনায় দ্বিগুণ  আর টনের হিসাবে প্রায় তিনগুণ বেশি। এই বিপুল বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশবান্ধব এবং নিরাপদ রিসাইক্লিং সুবিধায় বড় আকারের বিনিয়োগ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাহাজ ভাঙা শিল্পে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে বড় পরিবর্তন এসেছে। ২৬ জুন ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য সেফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টালি সাউন্ড রিসাইক্লিং অব শিপস। এখন থেকে জাহাজ ভাঙার পুরো প্রক্রিয়া হতে হবে নিরাপদ ও পরিবেশসম্মত উপায়ে।

২০০৯ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় স্ক্র্যাপ হয়েছে অন্তত ৮ হাজার ২২১টি জাহাজ। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৭৩ জন শ্রমিক, আহত হয়েছেন আরও ৫১৭ জন। অবশ্য পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রকৃত দুর্ঘটনা ও পেশাগত রোগের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এক্ষেত্রে নিয়মিত মনিটরিং ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে আরও প্রাণহানি ঘটতে পারে।

এই বাস্তবতায় পাকিস্তান সরকার গাদানি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডকে একটি ‘মডেল গ্রীন ইয়ার্ডে’ রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছে। প্রায় ১২ বিলিয়ন রুপির প্রকল্পে নির্মিত হবে আধুনিক যন্ত্রপাতি, ৩০ বেডের হাসপাতাল, ৩২ কিলোমিটার সড়ক, বসত কলোনি, স্কুল ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। ২০২৪ সালে আইএমও মহাসচিব আর্সেনিও ডোমিংগেজের সফরের সময় এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল।

এই মুহূর্তে ২৪টি দেশ হংকং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্ক। এসব দেশ ও অন্যান্য ফ্ল্যাগ স্টেট মিলে বিশ্ববাণিজ্যের মোট ৫৭ শতাংশ জাহাজ টনেজ নিয়ন্ত্রণ করে।

আইএমও মহাসচিব হংকং চুক্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। নিরাপদ ও টেকসই রিসাইক্লিং নিশ্চিত করতে বহু বছরের প্রচেষ্টার ফল আজ বাস্তবায়ন হলো।”

তবে এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের মতে, এই চুক্তি মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং পরিবেশগত বৈষম্য দূর করতে পুরোপুরি সক্ষম নয়। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ইনগভিল্ড জেনসেন মনে করেন, “এই চুক্তি মূলত জাহাজ মালিকদের সাশ্রয়ী বিকল্প দিচ্ছে, যারা প্রকৃত নিরাপদ ব্যবস্থার খরচ দিতে চায় না।”

তথ্যাভিজ্ঞদের মতে , আগামী দশক জাহাজ রিসাইক্লিং খাতে একটি বড় পরিবর্তনের যুগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে—যেখানে টেকসই বিনিয়োগ, শ্রমিক সুরক্ষা এবং পরিবেশ সুরক্ষা একসঙ্গে গুরুত্ব পাবে কি না, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ও স্থানীয় বাস্তবায়নের ওপর।