চার মিলিয়ন গ্রস টনেজ সমপরিমাণ জাহাজ স্ক্র্যাপ হওয়ার পূর্বাভাস
কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: বৈশ্বিক জাহাজ স্ক্র্যাপিং বাজারে ২০২৫ সালকে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হিসেবে দেখা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে নিম্নমুখী থাকার পর চলতি বছরে প্রায় চার মিলিয়ন গ্রস টনেজ সমপরিমাণ জাহাজ স্ক্র্যাপ হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই বাজারে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল। কারণ, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা স্ক্র্যাপ জাহাজের সর্বোচ্চ দরের ক্রেতা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুটি প্রধান কেন্দ্র ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ নিজেদের শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছে।
আন্তর্জাতিক বাজার এবং স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বর্তমানে প্রতিটন হালকা ওজনের জাহাজ বা এলডিটির দাম ৪৬০ থেকে ৪৯০ মার্কিন ডলারের মধ্যে অফার করছে। এটি বৈশ্বিক বাজারে সর্বোচ্চ। তুলনায় ভারতের আলাংয়ের আমদানিকারকরা ৪৩৫ থেকে ৪৬০ ডলার এবং পাকিস্তানের গাদানির আমদানিকারকরা ৪৪০ থেকে ৪৭০ ডলার অফার করছেন। অন্যদিকে ইউরোপের আলিয়াগা বা তুরস্কে দর প্রায় অর্ধেক, মাত্র ২৮০ থেকে ৩০০ ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে স্ক্র্যাপ স্টিলের ব্যাপক চাহিদা এবং ভাঙা জাহাজ থেকে সরাসরি নির্মাণ খাতে ব্যবহারযোগ্য রড উৎপাদনের কারণে দর এতটা উঁচু অবস্থানে রয়েছে।
২০২৪ সালে বৈশ্বিক জাহাজ স্ক্র্যাপিং ছিল ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ওই বছর মাত্র ৩২৪টি জাহাজ ভাঙা হয়, যার মোট টনেজ ছিল প্রায় ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন। আগের বছরের তুলনায় তা প্রায় ৩০ শতাংশ কম। তবে ২০২৫ সালে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজারে স্টিলের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুরনো জাহাজের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ায় স্ক্র্যাপিংয়ের প্রবণতা ফের বাড়ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামের ভাঙা জাহাজ থেকে দেশে বছরে গড়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন স্টিল পাওয়া যায়, যা দেশের মোট রডের চাহিদার প্রায় অর্ধেক জোগান দেয়। ফলে জাহাজ স্ক্র্যাপিং শুধু একটি শিল্প নয়, বরং বাংলাদেশের নির্মাণ খাতের অন্যতম প্রাণশক্তি। একই সঙ্গে এখানে কর্মসংস্থানও উল্লেখযোগ্য। সরাসরি ও পরোক্ষভাবে লাখো শ্রমিক এ খাতের সঙ্গে জড়িত।
এ ছাড়া বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় বিদেশি জাহাজ মালিকদের আস্থা বাড়ছে। বিশেষত হংকং কনভেনশন অনুসারে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ভাঙন প্রক্রিয়া চালুর চেষ্টা দেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করছে। এতে শুধু আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সুনামই বাড়ছে না, বরং ভবিষ্যতে আরও বেশি স্ক্র্যাপ জাহাজ বাংলাদেশমুখী হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বর্তমানে কেবল দক্ষিণ এশিয়ার নয়, পুরো বিশ্বের অন্যতম প্রধান জাহাজ স্ক্র্যাপিং কেন্দ্র। সর্বোচ্চ দর এবং স্থায়ী চাহিদা বাংলাদেশের বাজারকে এগিয়ে রাখছে। যদি এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে আগামী কয়েক বছরে বৈশ্বিক স্ক্র্যাপ বাজারে বাংলাদেশ আরও বড় অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে।