রামেশ ভট্টরায়, কাঠমান্ডু: নেপালজুড়ে জেন জ়ি প্রজন্মের গণআন্দোলনে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে তাঁদের দাবিগুলো। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পরও বিক্ষোভ থামেনি, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের দাবি এখন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।
মঙ্গলবারের ভয়াবহ সহিংসতার পর বুধবার সকাল থেকে বড় ধরনের অশান্তি না হলেও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ চলেছে বিভিন্ন জেলায়। ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনী নেপালের শাসনভার গ্রহণ করেছে এবং দেশজুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে।
মূল দাবি
- বিক্ষোভে নিহতদের সরকারি স্বীকৃতিতে ‘শহিদ’ ঘোষণা, তাঁদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ও আর্থিক সহায়তা প্রদান।
- গত তিন দশকের দুর্নীতি ও লুটপাটের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত।
- বিদ্যমান ‘হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভ’ ভেঙে দেওয়া এবং অন্তর্বর্তী সময়ে নতুন নির্বাচন।
- নাগরিক, বিশেষজ্ঞ ও তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান প্রণয়ন।
- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ—এই পাঁচ খাতে গঠনমূলক সংস্কার।
- বেকারত্ব কমানো, অভিবাসন রোধ ও সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে কর্মসূচি।
- ভবিষ্যতে স্বাধীন, সুষ্ঠু ও সরাসরি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা।
আন্দোলনের পটভূমি
সমাজমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থেকেই শুরু হয় তরুণদের ক্ষোভ। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে ওঠে। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে সূচিত এই বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। মঙ্গলবার সংসদ ভবন, সিংহ দরবার, সুপ্রিম কোর্ট এবং একাধিক মন্ত্রী-নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারির বাড়িও রক্ষা পায়নি। ওই দিনই পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ওলি।
সেনাবাহিনীর ঘোষণা
বুধবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে নেপালের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত শাসনভার তারা চালাবে। শান্তি বজায় রাখতে দেশজুড়ে কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী স্পষ্ট করেছে, লুটপাট বা ভাঙচুর করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করেছে তারা।
বিক্ষোভকারীদের আশা, রাষ্ট্রপতি ও সেনাবাহিনী তাঁদের প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়ন করবে। কারণ, আন্দোলনের ভাষায়— “এটি কোনও দল বা ব্যক্তির জন্য নয়, বরং নেপালের সব প্রজন্ম ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য।”